স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ গত বছর ভয়াবহ বন্যার পর এবার মাঠজুড়ে সোনালি ধান দেখে ভরে গেছে কৃষকের চোখমুখ। লম্বা লম্বা ধানের শীষে ভরা মাঠ যেন সোনালি কার্পেটে ছড়িয়ে আছে। কৃষক-কৃষাণি ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাঠজুড়ে। শ্রমিকরা লম্বা আইল ধরে হেলে দুলে ধান বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের উঠানে। সেখানে ধান মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে নারী-পুরুষরা। কৃষি উপকরণসহ সার, বীজ, কীটনাশক হাতের কাছে পাওয়ায় আবাদে বাম্পার ফলন হলেও আতঙ্কিত কৃষক ভাল দাম না পাওয়ায়। বর্তমান বাজারে কাঁচা ধানের মণ ৬শ’ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা। যা খরচ ওঠাতে পারছে না। কাঁচা ধানের মূল্য দিয়েই শোধ করতে হচ্ছে শ্রম মূল্য। ফলে কম দাম পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। তাদের দাবি ধানের সরকারী মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া এবং প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে চলতি বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১১ হাজার ৮৪২ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৭ হেক্টর। ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত ৪৫ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। তাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি আশা করছে কৃষি বিভাগের লোকজন। এবার হাইব্রিড ধান নির্ধারণ করা হয় ৪ দশমিক ৭৬ মেট্রিক টন, উফশী ব্রিধান-২৮ ৩ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং স্থানীয়তে এক দশমিক ৯৪ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে ৯টি উপজেলায় আবাদ হয়েছে হাইব্রিড, উফশী ব্রিধান-২৮ এবং স্থানীয় ধান। ধানের ক্ষেত দেখে যে কারই চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রচ- দাবদাহে চলছে ধান কাটা-মাড়াই। কিষাণ ধানের ক্ষেতের আইল ধরে সারিবদ্ধ হয়ে কাঁধে লম্বা বাঁশ ফেলে দু ধারে ধানের আঁটি নিয়ে হন হন করে হেঁটে নিয়ে যাচ্ছে উঠানের দিকে। সেখানে ধান মাড়াই ঝাড়াই করা হচ্ছে। পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই রঘুরায় গ্রামের কৃষক মোস্তা, বদিয়ত ও জমসেদ জানান, আবাদ ভাল হলেও বোরো মৌসুমে ফলন হয়েছে একর প্রতি ৬০ থেকে ৬৫ মণ ধান। বর্তমানে ৬০০/ ৬৫০ টাকার বাজার দরে খরচ বাদ দিলেও লাভ বেশি একটা থাকছে না। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বাম্পার ফলন হওয়ায় দিনমজুররা ধান ক্ষেতে চুক্তি ভিত্তি কাজ করছে। পুরুষরা প্রতিজন দিনে ৪/৫ শ’ টাকা আয় করছে। মহিলা শ্রমিকরাও পাচ্ছেন মাত্র ৩ শ’ থেকে ৩৫০ টাকা। ফলে শ্রমিকদের সংসারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বেড়ে যাচ্ছে।