ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোয়া তিন কোটি টাকা জলে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রহ্মপুত্রে ক্রস বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২০ মে ২০১৮

ব্রহ্মপুত্রে ক্রস বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ১৯ মে ॥ প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের জামালপুর শহরমুখী চ্যানেলে ৫০০ মিটার ক্রস বাঁধ নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্রের শর্তানুযায়ী মাটি কেটে উঁচু বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও নদী থেকেই ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে কার্যাদেশ পাওয়া মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছে। এই চ্যানেলটি খুবই খর¯্রােতা হওয়ায় আসছে বর্ষায় এই বালির বাঁধটি ধসে গিয়ে সরকারের প্রায় সোয়া তিন কোটি টাকাই জলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প টেকসই করার লক্ষ্যে জামালপুর শহরের ফৌজদারি মোড়ের উজানে শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫০০ মিটার ক্রস বাঁধের অস্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ নামের এই প্রকল্প হাতে নেয় জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূলত জামালপুর শহরঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র নদের চ্যানেলটির গতিপথ ঘুরিয়ে দেয়ার জন্যই এই বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে দরপত্রে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে এই বাঁধ নির্মাণের কাজটি পায় ঢাকার এলএ-টিটিএসএল জয়েনভেঞ্চার কোং লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু জামালপুর পাউবো জানিয়েছে, জামালপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ ফজলুল হক, জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ হেলাল উদ্দিন, শেরপুর সদরের চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আকবর হোসেনসহ আরও অন্তত ১০ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজটি করছে। দরপত্রের শর্তানুযায়ী মাটি কেটে এই বাঁধ নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রতি ঘনমিটার মাটি কাটা বাবদ ধরা হয়েছে ১০৫ টাকা করে। সেখানে প্রতি ঘনমিটার বালি তোলার খরচ পড়বে মাত্র ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা করে। এতে করে সিন্ডিকেটটিও বেশ লাভবান হবে। বৃহস্পতিবার ব্রহ্মপুত্র নদের নির্মাণাধীন বাঁধের প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নাম এবং এ প্রকল্পের কাজের ধরন সংক্রান্ত কোন সাইডবোর্ডও দেখা যায়নি। বাঁধের পূর্ব পাশে অন্তত ১৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালি তুলে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০০ মিটারের মধ্যে প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ বালি দিয়ে উঁচু করা হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী বালি দিয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণের পর সেই বাঁধের ওপর থেকে দুই পাশে নিচে পর্যন্ত পুরোটা জিও টেক্সটাইলের চাদরে ঢেকে কিছু দূর পরপর বালি ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে চাপ দেয়া হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ করা কথা রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের এই চ্যানেলটি বর্ষাকালে খুবই খর¯্রােতা থাকে। এই চ্যানেলটির পানি প্রবাহ সরাসরি জামালপুর শহররক্ষা বাঁধে আঘাত হানে। ফলে এই চ্যানেলের মুখে বালির বাঁধ টিকবে কি না সে নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় প্রতিনিধি জামালপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ ফজলুল হক বলেন, দরপত্রের শর্ত মেনেই আমরা এই বাঁধ নির্মাণ করছি। যেদিকে তাকানো যায় নদী আর নদী। এত বড় একটি বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে এত মাটি কোথায় পাওয়া যাবে। তাই নদীর এই বালিমাটি ছাড়া কোন উপায় নেই। এই বাঁধ নির্মাণে আমরা কোন ধরনের অনিয়ম করছি না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। কারণ প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য নদীর সুবিধাজনক স্থানে বালিমাটি খনন করার নির্দেশনা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বাঁধের কাছাকাছি সুবিধাজনক স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি তুলে এনে বাঁধ তৈরি করছে। মাটি দিয়ে করলে পুরাটাই ঘাস লাগাতে হতো। ঘাসের ওপর জিও টেক্সটাইলস টিকবে না। তাই বালি দিয়ে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আসছে বর্ষায় যদি টিকে যায় তাহলে পরবর্তীতে এই বাঁধটিকে মজবুত করার প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
×