ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খাল ভরাট করে স্থাপনা

শত শত একর বোরো তলিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ২০ মে ২০১৮

শত শত একর বোরো তলিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ১৯ মে ॥ খাল ভরাট করে দখল করায় এবং অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ ও স্থাপনা নির্মাণ করায় মির্জাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষকের আবাদ করা শত শত একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান বৃষ্টির পানির জলাবদ্ধতায় ডুবে যাচ্ছে। এই জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর ফসলহানি ঘটে কৃষক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও প্রতিকার করতে কেউ এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ দিকে খালের প্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে একদিকে যেমন সময়মতো ফসল রোপণ করতে পারেন না কৃষক অন্যদিকে ফসল ফলিয়েও তা ঘরে তুলতে পারেন না বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। মির্জাপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় সবচেয়ে বড় কৃষি আবাদ হচ্ছে বোরো চাষ এবং দ্বিতীয় বৃহত্তর আবাদ হচ্ছে সরিষা আবাদ। চলতি বছর ২০ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার হেক্টর। বৃহস্পতিবার উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুরী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বৃষ্টির পানিতে শত শত একর জমির বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কোমর পানিতে নেমে আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন । নিধিবাড়ী-বর্ধনপাড়া-কেশবপুর খালটি সচল না থাকায় সিন্দুরী বিলের বর্ষার পানি দীর্ঘদিন জমে থাকে। এতে সরিষা ও বোরো আবাদ ১৫ দিন থেকে একমাস পিছিয়ে যায়। কৃষক সরিষা তুলে বোরো চাষ করলে ধান পাকার আগেই তা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। একইভাবে এবারও এ এলাকার শত শত একর বোরো জমির ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে ওই এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন। নিধিবাড়ী খালটি সিন্দুরী বিল হতে বর্ধন পাড়া, রুয়াল, চামুটিয়া ও কেশবপুর হয়ে বহুরিয়া নদীর পূজাঘাটে মিলেছে বলে ওই এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। সিন্দুরী গ্রামের কৃষক বদর মিয়া ও কৃষ্ণ সরকার বলেন, বর্ধন পাড়া-নিধিবাড়ী খালটি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভরাট করে দখল করায় এ এলাকার কৃষক প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এত বড় সমস্যায় কেউ এগিয়ে আসছে না। ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, নিধিবাড়ী খালটি কেশবপুর এলাকায় ভরাট হওয়ায় তার ইউনিয়নের চানপুর, ভাওড়া, হারিয়া ও পাইখার এলাকার কৃষক জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছরও বিপুল পরিমাণ বোরো ধান তলিয়ে গেছে বলে তিনি জানান। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মহেড়া ইউনিয়নের কুমুল্লি বিলে আবাদ করা বোরো কৃষকরা। মির্জাপুর উপজেলা কৃষকলীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, বিল সংলগ্ন শুভুল্যা খালের মাথায় ভরাট হওয়ায় এবং লৌহজং নদী সংলগ্ন সারুটিয়া একলাকায় খালের মধ্যে উঁচু করে কংক্রিট বাঁধ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করায় স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল করতে পারে না। একইভাবে হাড়ভাঙ্গা খালটিও দুষ্টচক্র ভরাট করে ফেলেছে। এতে বিলটিতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে কৃষকের সরিষা ও বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এবারও কৃষকের অনেক বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে বলে আবদুল খালেক উল্লেখ করেন। এ ছাড়া গ্রামাটিয়া এলাকায় ভররার খালের মাথা ভরাট করায় ভাইয়াকুড়া বিলের শত শত একর জমির বোরো ধান বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে তলিয়ে গেছে বলে বানাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন মোঃ ফারুক খান জানিয়েছেন। মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমানের সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে কৃষকের ফসল রক্ষার জন্য ভরাট হওয়া খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের জন্য প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×