ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাপ কাটাতে পারছে না ফেসবুক

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২০ মে ২০১৮

চাপ কাটাতে পারছে না ফেসবুক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চালু হওয়ার পর থেকে দারুণভাবে এগিয়েছে ফেসবুক। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য। ২০০৪ সালে জাকারবার্গের হাত ধরে এর যাত্রা শুরু। এরপর বিভিন্ন নীতি ও ফিচারের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে বিপুলভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি। বর্তমানে এর গ্রাহক সংখ্যা ২০০ কোটিরও বেশি। ইতোমধ্যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে বর্তমানে বেশ চাপে রয়েছে ফেসবুক। কয়েকদিন আগেও মনে করা হতো, গ্রাহকদের মধ্যে যে প্রতিষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা এত বেশি, সেটি কখনও বিপদগ্রস্ত হবে না। কিন্তু এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে সাম্প্রতিক কিছু কর্মকা-। ফেসবুক বর্তমানে এতটাই চাপে রয়েছে, বারবার দুঃখ প্রকাশ করেও ইতিবাচক কোনও ফল পাচ্ছে না। বিভিন্ন মহল থেকে ফেসবুকের ওপর প্রতিনিয়ত চাপ আসছে। অনেক গ্রাহক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, কেউ কেউ করছেন তীব্র সমালোচনা। এই তালিকা থেকে বাদ যাননি এ্যাপল প্রধান টিম কুক, টেসলার স্বত্বাধিকারী এলন মাস্ক কিংবা আলিবাবার প্রধান জ্যাক মা-এর মতো প্রযুক্তি ব্যক্তিত্বরাও। ঘটনার শুরু মার্চ মাসে। হঠাৎ খবর বের হয়, ক্যামব্রিজ এ্যানালিটিকা ৫ কোটি (পরবর্তী সময়ে জানা যায় ৮ কোটিরও বেশি) ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য অপব্যবহার করেছে। আর এতে সহায়তা রয়েছে ফেসবুকের। শুরুতে এটি গুঞ্জন মনে হলেও ধীরে ধীরে সবই পরিষ্কার হয়ে যায়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষও এটা স্বীকার করে নেয়। শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। ব্যবহারকারীরা ফেসবুক প্রত্যাখ্যান শুরু করেন। সব মিলিয়ে প্রভাব পড়ে ফেসবুকের শেয়ারে। প্রথমবারের মতো এভাবে তাদের শেয়ারের দরপতন হয়। এরপর একের পর এক বিবৃতি দিতে থাকেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। জাকারবার্গ নিজে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমা চাওয়া শুরু করেন। এমনকি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ক্ষমা চেয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু সংবাদপত্রে দেয়া বিজ্ঞাপনে সবার কাছে মাফ চান তিনি। পাতাজুড়ে দেয়া ক্ষমা চাওয়ার ওই বিজ্ঞাপন এসেছে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি ব্রডশিট ও ট্যাবলয়েড পত্রিকায়। এর মধ্যে সানডে টেলিগ্রাফ, সানডে টাইমস, মেইল অন সানডে, অবজারভার, সানডে মিরর ও সানডে এক্সপ্রেসের শেষ পৃষ্ঠায় এই বিজ্ঞাপনটি দেখা গেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালেও এমন বিজ্ঞাপন এসেছে। ওই বিজ্ঞাপনে জাকারবার্গ বলেন, কোটি কোটি গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ফেসবুকের আরও অনেক কিছুই করার ছিল। বিজ্ঞাপনগুলোতে বলা হয়, ‘এটা একটা বিশ্বাসভঙ্গ ও এজন্য আমি দুঃখিত।’ এরপর ১১ এপ্রিল তথ্য অপব্যবহারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বটি ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে শুরু করেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এ সময় তিনি বলেন, ফেসবুক ভবিষ্যতে ইতিবাচক কাজে ব্যবহার হবে। এটাই নিশ্চিত করতে চাই আমরা। দুই দিনের এই প্রশ্নোত্তর পর্বে জাকারবার্গকে অসংখ্য প্রশ্ন করা হয়। এরমধ্যে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত প্রশ্নও ছিল। তথ্য অপব্যবহারের ঘটনায় ফেসবুকের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমেছে। হারানো এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জাকারবার্গ নিজে এগুলো তদারকি করছেন। তথ্য অপব্যবহারের খবর প্রকাশ হওয়ার পর পরই জাকারবার্গ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানিয়েছিলেন, আমি ফেসবুক চালু করেছিলাম। তাই দিনশেষে এই প্ল্যাটফর্মে যা কিছু ঘটে তার জন্য আমিই দায়ী। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখতে আমি গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্ল্যাটফর্মটিকে আরও সুরক্ষিত করা হবে। তিনি আরও লেখেন, এসব সমস্যা সমাধানে অনেক সময় লাগবে আমি জানি। কিন্তু আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, আমরা এসব নিয়ে কাজ করব এবং দীর্ঘ পরিসরে আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করব। ইতোমধ্যে গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে নিজেদের পলিসিতে পরিবর্তন এনেছে ফেসবুক। ভবিষ্যতে কোনও নির্বাচনে ফেসবুক গ্রাহকদের তথ্য যেন অপব্যবহার না হয়, সেই লক্ষ্যে একটি রিসার্চ কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দিয়েছেন জাকারবার্গ।
×