ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের বাজেটে খুশি রাখা হবে ভোটারকে

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২০ মে ২০১৮

ভোটের বাজেটে খুশি রাখা হবে ভোটারকে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মানবসম্পদ উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। আসন্ন বাজেটে দ্বিতীয় গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন ও জ্বালানি খাত। এ ছাড়া, পৃথক বাজেট বরাদ্দ থাকছে সরকারের মেগা প্রকল্পে। নতুন বাজেটে কমবে কর্পোরেট ট্যাক্স। বাড়বে ট্যাক্সের পরিধি। অপ্রয়োজনীয় শুল্ক ও কর বাদ দেয়ার ঘোষণাও থাকতে পারে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবারের বাজেটে বেসরকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর রূপরেখা থাকছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের পরিমাণ ও আওতা বাড়বে। বাড়বে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত ভাতার পরিমাণ। আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে চার লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো। বিষয়টি অর্থমন্ত্রী নিজেই উল্লেখ করেছেন। সে হিসেবে আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে বর্তমান (২০১৭-১৮) অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। নতুন অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) পরিমাণ ধরা হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা এ অর্থবছরের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ আছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের মোট এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার এডিপির মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬০ হাজার কোটি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে সাত হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা খরচের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হতে পারে সাত দশমিক ৬ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির হার ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী বছর মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ১৭টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই ১০টি খাত হচ্ছে- মানবসম্পদ উন্নয়ন, পরিবহন, বিদ্যুত ও জ্বালানি, ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্ম, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ, কৃষি, নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পানি সম্পদ ও জনপ্রশাসন। এবারের বাজেটে বেসরকারী খাতের জন্য পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের একটি রূপরেখাও থাকবে বলে জানা গেছে। জানা যায়, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ২৮ জুন জাতীয় সংসদে নতুন বছরের বাজেট পাশ হবে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। এটি হবে শেখ হাসিনার সরকারের টানা দ্বিতীয় মেয়াদের ১০ম বাজেট। আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা ১০ম বাজেট হলেও, এটি হবে তার ১২তম বাজেট পেশ। অর্থমন্ত্রী মুহিত এর আগে এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের ২টি জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের বছর হবে ২০১৮ সাল। এ বছরের ডিসেম্বরেই হতে পারে ১১তম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন। তাই এবারের বাজেট হবে সরকারের নির্বাচনী বাজেট, মানুষকে খুশি করার বাজেট। জনগণের প্রত্যাশার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রণীত হবে এ বাজেট। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা নিয়ে বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিক ব্যবহার, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও নতুন রফতানির বাজার অনুসন্ধানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যেই আগামী (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এবার ভোটাররা যাতে চাপের মুখে না পড়েন সেদিকটি বিবেচনায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করা হবে। এ কারণে আগামী বাজেটে অপ্রয়োজনীয় শুল্ক ও কর বাদ দেয়া হতে পারে। আয়কর পরিশোধের ক্ষেত্রে হয়রানি কমাতে ই-পেমেন্ট এবং ই-ফিলিং চালু করার ঘোষণা থাকতে পারে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিটিআরসির আইন সংশোধন করা হতে পারে। রাজস্ব ব্যয়ের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১৩ ডিজিটের পরিবর্তে ৩৭ ডিজিটের বাজেট ও এ্যাকাউন্টিং ক্ল্যাসিফিকেশন পদ্ধতি চালু করা হতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতা সরাসরি জি-টু-পি (গভর্মেন্ট টু পাবলিক) পদ্ধতিতে প্রদানের উদ্যোগ থাকতে পারে।
×