ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিড়ি শিল্প তুলে দেয়ার আগে শ্রমিকরা চান বিকল্প কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২০ মে ২০১৮

বিড়ি শিল্প তুলে দেয়ার আগে শ্রমিকরা চান বিকল্প কর্মসংস্থান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মর্জিনা বেগম। বাড়ি রংপুরের মামুদেরপাড়া গ্রামে। মর্জিনা বেগমের স্বামী অন্যের বাড়িতে যখন যে কাজ পান তাই করেন। তাদের চার ছেলে। বড় ছেলে মেহেদী হাসান কারমাইকেল কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এর পরের জন মাহাবুব এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। আর মনিরুজ্জামান মনির পড়ে অষ্টম শ্রেণীতে। স্বামী এবং স্ত্রী দুজনে যা আয় করেন তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না বলেই মর্জিনা বেগমকে কাজ করতে হয় বিড়ির কারখানায়। প্রতিদিন তিনি ভোর চারটার সময় গিয়ে তামাক ফ্যাক্টরিতে বিড়ি তৈরির কাজ করেন। বিকেল চারটা পর্যন্ত সেখানে বিড়ি তৈরি করেন। এতে অন্তত দৈনিক পাঁচশ’ টাকা করে রোজগার হয় মর্জিনার। এক হাজার বিড়ি তৈরি করে পান ৩৬ টাকা। তবে দৈনিক যে পাঁচশ’ টাকা আয় করেন তা মর্জিনা বেগমের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার ছেলেরা। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগে সকালে গিয়ে মর্জিনা বেগমকে সহযোগিতা করেন। শুধু মর্জিনা নয় তার মতো অনেক নারী জীবিকার জন্য স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন বিড়ি কারখানা। তবুও তারা তাদের প্রাপ্য মজুরি পান না। অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এক হাজার বিড়িতে শ্রমিকদের ১০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দেয়া হয়। সম্প্রতি এসব শ্রমিক শুনেছেন আগামী দুই বছর পর আর বিড়ি শিল্প থাকবে না। এই শিল্প না থাকলে তাদের কি হবে? সংসার চলবে কি ভাবে? তাই বিড়ি শিল্প তুলে দেয়ার আগে তারা চান বিকল্প কর্মসংস্থান। যাতে তারা দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন। আর সেই দাবি নিয়েই শনিবার মর্জিনার মতো প্রায় ৩০ হাজার বিড়ি শ্রমিক সারা দেশ থেকে রাজধানীর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ বিড়ি-শ্রমিক প্রতিনিধি সম্মেলনে এসে মিলিত হন। জাতীয়ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) এবং বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন এই সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে, ২০ লাখ বিড়ি শ্রমিক ও ১০ লাখ তামাক চাষীকে বেকার করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের। অনিবার্য কারণবশত তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘বিড়ি শ্রমিক প্রতিনিধি সম্মলনে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি। জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করব।’ প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রাক্তন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান। তিনি বলেন, ‘সেই পাকিস্তান আমল থেকে আমরা বিড়ি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমরা শ্রমিকদের এই ন্যায্য আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করছি। তিনি আরও বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের আন্দোলনের সংগ্রাম জাতীয় সংসদের মধ্যে হবে আর আমরা বাইরে সংগ্রাম করব।’ বিড়ি-শ্রমিক প্রতিনিধি সম্মেলনে সংহতি বক্তব্য রাখেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এমপি এবং বাংলাদশে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ফজলুল হক ও কবি কাজী রোজী। কবি কাজী রোজী বলেন, ‘কোন বৈষম্য নয়, বিড়ি-সিগারেটের জন্য একই নিয়ম দেখতে চাই।’ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আরডিসির চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না করে বিড়ি শিল্প ধ্বংস করা যাবে না। বিড়ি সিগারেট দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বন্ধ করতে হলে দুটিই একসঙ্গে বন্ধ করতে হবে।’
×