ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুন্তল বাড়ৈর ক্যানভাসে বিশৃঙ্খল ঢাকার চালচিত্র

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২০ মে ২০১৮

কুন্তল বাড়ৈর ক্যানভাসে বিশৃঙ্খল ঢাকার চালচিত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সময়ের তিলোত্তমা শহর ঢাকা ক্রমশ হয়ে উঠছে বিবর্ণ। নাগরিকায়নের চাপে ইট-পাথরের নগরটিতে চলছে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলতা। উর্ধমুখী ভবনের ভিড়ে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ। যান আর জনজটের চাপে সবটুকু সৌন্দর্য হারিয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে এই শহর। রাজধানীর সেই বেদনার বয়ান শিল্পের আলোয় মেলে ধরেছেন তরুণ শিল্পী কুন্তল বাড়ৈ। রং আর রেখার আশ্রয়ে সৃজিত চিত্রকর্মের সঙ্গে স্থাপনাশিল্পের সমন্বয়ে উপস্থাপিত হয়েছে নগরের সেই বিবর্ণতার আখ্যান। ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে দৃশ্যমান হওয়া সেই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ডিসপ্লেসড ইন ঢাকা’ বা ‘নাগরিক বিচ্যুতি। প্রদর্শনীর বিষয়ে কুন্তল বাড়ৈ বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, অপরিকল্পিত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা তার সঙ্কটের চূড়ান্তে পৌঁছে গেছে। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ, যানজট, উন্নয়ন-উন্মত্ততা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছে। নির্দিষ্ট কিছু মানুষÑযারা একটি বিশৃঙ্খল মহানগরীর ধকল সইতে পারেনÑ ঢাকা তাদের জন্য এক দরকারী নরক হলেও বেশিরভাগ ঢাকাইয়ারা আজ ঢাকাকে বাসযোগ্য আশ্রয়স্থল বলে মনে করেন না। কুন্তল বাড়ৈ তার ক্যানভাস আর স্থাপনাশিল্পে শহরের সৌন্দর্য হারানোর বেদনাকে ধারণ করেছেন। কোথাও আবার শিল্পী আশাহীনতার মাঝেও খুঁজেছেন আগামীর সম্ভাবনা। শিল্পী বিশ্বাস করেন, এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও কোথাও জীবনের একটা সমন্বয় বিরাজ করে যার ভেতর দিয়ে একটি নতুন তত্ত্ব হয়তো একদিন বের হয়ে আসবে। তাই কুন্তলের শিল্পকর্ম শুধুই যাপিত অভিজ্ঞতার রূপায়ণ নয়, কিংবা নয় শুধু প্রচলিত নান্দনিকতায় মিশে যাওয়া বাস্তবতার মূর্তপ্রকাশ। তার শিল্প-প্রয়াস আসলে এই দুয়েরই সংমিশ্রণ। প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয়েছে প্রায় ১০০টি শিল্পকর্ম। মিক্সড মিডিয়া, প্রিন্ট ও এ্যাক্রিলিকের সঙ্গে ঠাঁই পেয়েছে স্থাপনাশিল্প। ৪ মে থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল শনিবার। আলোচনায় আসামের শিলচরের ভাষাশহীদদের স্মরণ ॥ আত্মত্যাগের সেই ঘটনাটা ঘটে ১৯৬১ সালে ১৯ মে। বাংলা ভাষার দাবিতে ভারতের আসাম প্রদেশের শিলচর জেলায় প্রাণ বিসর্জন ১১ জন ভাষাশহীদ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে সেই শহীদেরাও দাবি তুলেছিল মাতৃভাষা বাংলা হবে আসাম প্রদেশের অন্যতম দাফতরিক ভাষা। শনিবার ভাষার জন্য আত্মদানের সেই দিনে রাজধানী ঢাকায়ও নানা আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে সেই সব শহীদদের। এ দিন সকালে এ বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের বাইর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীব। একাত্তরের যাত্রী আয়োজিত এ সভায় আলোচনা করেন লেখক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমির উপপরিচালক তপন বাগচী ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ঝর্ণা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ সামাদ প্রমুখ। বরাক উপত্যকার শহীদদের স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এই দিনটিকে বড় পরিসরে পালন ও স্মরণের আহ্বান জানান। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলন সারা পৃথিবীতে এত আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, এর অভিঘাত বাঙালী সমাজ জীবনে, রাজনীতিতে, সাংস্কৃতিক জীবনে এতটাই ছিল যার ফলে আর যে সমস্ত জায়গায় ভাষা আন্দোলন হয়েছিল তা ততটা আলোচিত হয়নি। মানুষের রাষ্ট্রের পরিচয় বদলালেও তার ভাষার পরিচয় বদলাতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে যে সংহতি রাষ্ট্রীয় ভূগোল তার জন্য কোন বাধা না। তাদের স্মরণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আরও যেন ব্যাপকভাবে ভালভাবে হয়, একুশে ফেব্রুয়ারির মতো করেই এই দিনটি পালন করতে হবে। তপন বাগচী বলেন, আমরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি বায়ান্ন সালে। তারই পথ ধরে ১৯৬১ সালে আসামের বাঙালীরা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু এই দিনটি আরও গুরুত্বের সঙ্গে যেমন মর্যাদা পাওয়ার কথা, তা পায়নি। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের যে কোন মায়ের ভাষাকে স্মরণ করার দিন। একইভাবে আমরা ১৯ মে কেও স্মরণ করতে পারি। বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকা, ফেসবুক, নাটক দেখলে বোঝা যায়, প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষাকে বলাৎকার করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মনে হচ্ছে আমাদের আবার লড়তে হবে।
×