ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের হয়রানির কৌশল ॥ সিসি ক্যামেরায় তথ্য

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২০ মে ২০১৮

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের হয়রানির কৌশল ॥ সিসি ক্যামেরায় তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রমজানে জনগণকে হয়রানি না করতে ট্রাফিক ও থানা পুলিশকে সহনীয় পর্যায়ে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হলেও মানছে না ট্রাফিক পুলিশ। রমজান মাসেও একটি নষ্ট কাভার্ড ভ্যানকে হয়রানির মাধ্যমে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। যা আকবর শাহ থানাধীন পাহাড়তলী রেলওয়ে কবরস্থানের কোণে থাকা সিএমপির সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে রয়েছে। কিন্তু পুলিশের অপরাধের বিচার না হওয়ার কারণে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না। অতি উৎসাহের সঙ্গে এই স্পটে থাকা তিনটি সিসি ক্যামেরার নিচে প্রতিনিয়ত ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি অব্যাহত আছে। প্রশ্ন উঠেছে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মাসুদ-উল-হাসানের এমন নির্দেশনা কেন মানছে না ট্রাফিক পুলিশ। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকেই জাকির হোসেন সড়কের আকবর শাহ মাজারের ঠিক পূর্বকোণে মহাজন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির একটি কাভার্ড ভ্যান (ঢাকামেট্রো-ট-১৩-০০৫৮) ঢাকামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। গাড়িটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু সকাল ৭টা ৩১ মিনিটের সময় একটি হিরো হোন্ডা নিয়ে অফ ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট হাসান ও কনস্টেবল কাউসার ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় গাড়ির কেবিনের ভেতর ড্রাইভার রবিউল ও তার সহযোগী ঘুমাচ্ছিল। কনস্টেবল কাউসার তাদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে কেবিনের ভেতর থেকে নিচে নামিয়ে আনে। এ সময় সার্জেন্ট হাসান ড্রাইভারের কাছে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়। এতে চালক অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু কনস্টেবল কাউসার ড্রাইভার রবিউলকে জিজ্ঞেস করেন তাদের কাছে টোকেন আছে কিনা। টোকেন নেই বলার পর ২ হাজার টাকা দাবি করে বসে কনস্টেবল কাউসার। এক পর্যায়ে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে সার্জেন্ট হাসান চালকের কাছ থেকে ডকুমেন্ট নিয়ে নেয়। কিন্তু ডকুমেন্টগুলো পড়ে দেখে কনস্টেবল। সবকিছু ঠিক থাকার পরও অর্থ আদায়ের অপচেষ্টায় মেতে উঠে ট্রাফিক পুলিশের এই দুই সদস্য। এরপর সার্জেন্ট হাসান রেকার (ব্রেক ডাউন) আসার জন্য ওয়াকিটকিতে বলার চেষ্টা করলে কনস্টেবল কাউসার সার্জেন্টের ওয়াকিটকি টেনে হাতে নিয়ে ফেলে। নিজেদের মধ্যে আঁতত থাকায় অপরাধ করলেও সার্জেন্ট কনস্টেবলের সঙ্গে কোন টুঁ শব্দ করেননি। এ সময় এই কনস্টেবল ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির চেষ্টার বিষয়টি পথচারীরাও আঁচ করতে পারায় প্রথমে সার্জেন্ট তাৎক্ষণিক স্থান ত্যাগ করে ঘটনাস্থল থেকে ৫০ গজ দূরে বাইপাস সড়কে গিয়ে দাঁড়ায়। পরে কনস্টেবলের মোবাইলে কল দিয়ে চালককে সার্জেন্টের কাছে নিয়ে যেতে বলে। দরকষাকষির একপর্যায়ে সেখানে ইয়ামাহা মডেলের মোটরসাইকেলে হাজির হন আরেক সার্জেন্ট আরাফাত। পুলিশবিটমুখী বাইপাস রাস্তার ওপর বিপরীতমুখী মোটরসাইকেলে বসেই খোশগল্পে কিছু সময় কাটান এই তিনজন। এ সময় জিইসির দিক থেকে আসা সার্জেন্ট ফারুক জাকির হোসেন সড়ক থেকে ওই বাইপাস সড়ক দিয়ে এই দুই সার্জেন্টকে না দেখার ভান করে চলে যান। অবশেষে সকাল ৮টা ৫ মিনিটের সময় বাইপাস সড়ক থেকে ট্রাফিক পুলিশের ওই তিন সদস্য যার যার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা সার্জেন্ট হাসান ও কনস্টেবল কাউসার চালক রবিউলসহ আবার ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন। এবার স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের আরেক কৌশল বেছে নেয় সার্জেন্ট হাসান। এবার ৮টা ৭ মিনিটের সময় ট্রাক থেকে দুইজনকে নামিয়ে ট্রাকটিকে ধাক্কা দিয়ে চালক রবিউলকে দিয়ে স্ট্যার্ট বিহীন অবস্থায় রাস্তার ঢালুতে কনস্টেবলের পাহারায় পাহাড়তলী রেলওয়ে কবরস্থানের দিকে তথা সিএমপির সিসি ক্যামেরার সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাহাড়তলী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে। তবে এই তথ্য সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড রয়েছে। পুলিশের এমন ঘটনাগুলো মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড রয়েছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আসন্ন রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় থানা ও ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি তল্লাশির নামে যেন হয়রানি না করে এমনকি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোন গাড়িকে হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিএমপি কমিশনার মাসুদ উল হাসান।
×