স্টাফ রিপোর্টার ॥ পায়ের ব্যথায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া হাঁটতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
রিজভী বলেন, কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তিনি হাত ও পায়ের ব্যথায় প্রচ- কষ্ট পাচ্ছেন। ব্যথায় হাঁটতে পারছেন না। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেত্রী খালেদা জিয়াকে জাল নথি তৈরির মাধ্যমে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও এখনও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। বরং নতুন নতুন মামলায় তাকে আটকানো হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী।
বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভী বলেন, পবিত্র মাহে রমজানেও খালেদা জিয়ার ওপর সর্বোচ্চ জুলুম চলছে। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ায় বিশ্বব্যাপী আজ নিন্দার ঝড় উঠেছে। তিনি যেসব মামলায় অতীতে জামিনে ছিলেন সেসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও কীভাবে একজন বয়স্ক মানুষকে কারাগারে আটকে রেখে কষ্ট দেয়া হচ্ছে? বিএনপি চেয়ারপার্সনকে তিলে তিলে শেষ করে দিতেই জামিনযোগ্য মামলায়ও তাকে জামিন দেয়া হচ্ছে না।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই নানা ফন্দি-ফিকির করছে কীভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে আবারও ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন করা যায়। ‘বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বিএনপি দূরে সরে যাচ্ছে না বরং আপনারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।
রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি করার জন্য দেশী-বিদেশী মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেটিরই আভাস পাওয়া যাচ্ছে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিএনপিকে মাইনাস করে প্রহসনের নির্বাচন আর এ দেশে হতে দেয়া হবে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন জনগণ হতে দেবে না।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যার্থ হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, আমরা আশা করব প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। কারণ শুধু দেশবাসী নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন অত্যন্ত জরুরী।
রিজভী বলেন, খুলনার ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও হেরেছে গণতন্ত্র, হেরেছে ভোটাধিকার, হেরেছে নির্বাচন কমিশন। খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট কেলেঙ্কারির আরেকটি নতুন মডেল জনগণ প্রত্যক্ষ করল। এই নতুন মডেলের ভোট ডাকাতির আবিষ্কারক শেখ হাসিনা। তাই তার অধীনে কখনই কোন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে পারে না।
রিজভী বলেন, দেশের সর্বত্রই নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, লাইন ধরে সিল মারা, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেয়া, ২০ থেকে ৩০ মিনিটে ১ হাজার ২০০ ব্যালটে সিল মারা, মরা মানুষের ভোট প্রদান ইত্যাদি নতুন মডেলের নির্বাচনের দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ নানা গোপন চুক্তির মাধ্যমে দেশ বিক্রি করে দিতে পারেন, তার কাছে গণতন্ত্রই বা কী আর অবাধ নির্বাচনই বা কী, কোনটিরই কোন দাম নেই।
রিজভী বলেন, রমজানে দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সীমাহীন মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ দিশাহারা। বাজার নিয়ন্ত্রণে ১২টি সংস্থাকে নাকি সরকার নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন সিন্ডিকেটের জন্য তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে রোজার দিনেও অধিকাংশ সময় বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস থাকে না। কিন্তু সেদিকে সরকারের নজর নেই।
চেইন অব কমান্ড না থাকায় সরকার রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থÑ মোশাররফ ॥ চেইন অব কমান্ড না থাকায় সরকার রোজার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গণআন্দোলনের মাধ্যমেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করে নিতে হবে। তবে আন্দোলন ঘোষণা দিয়ে হয় না। কোটা আন্দোলনে কোন নেতাও ছিল না। তারপরও এ আন্দোলন সফল হয়েছে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম নামক একটি সংগঠন আয়োজিত ‘গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, সময় আসছে। জনগণ আর আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। নিজেরাই রাস্তায় নেমে নিজেদের অধিকার আদায় করে নেবে। সরকার তখন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। আর খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং ২০ দল ছাড়া দেশে কোন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।
ড. মোশাররফ বলেন, খালোদা জিয়াকে মাইনাস করে যে নির্বাচনের পরিকল্পনা করা হয়েছে জনগণ তা মেনে নিবে না। জনগণের সঙ্গে বারবার প্রতারণা করা যায় না। দেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন। তারা বারবার প্রতারিত হবে না। যদি ২০১৪-এর পথে আওয়ামী লীগ হাটে জনগণ তা রোধ করবে। যারা মনে করছেন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে থাকবেন তা ভুলে যান। জনগণ রাস্তায় নামলে টিকতে পারবেন না।
বাণিজ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে ড. মোশাররফ বলেন, তিনি বলেছিলেন, রমজানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়বে না। অথচ রমজান শুরুর দুই দিনের মধ্যে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ তাদের কোন চেইন অব কমান্ড নেই। তিনি বলেন, এ সরকারের কবল থেকে মুক্তি পেতে হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে।
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে ড. মোশাররফ বলেন, হাইকোর্ট জামিন দিল, আপীল বিভাগও জামিন দিল। কিন্তু তিনি জামিন পেলেন না। খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে সরকার যে নির্বাচন করতে চায় সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ তা মেনে নেবে না।
ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। তাই ব্যাংকগুলো আজ দেউলিয়া। এফবিআইর তদন্তে এসেছে রিজার্ভ লুট হয়েছে সরকারের লোকজনের সহযোগিতায়। দেশের শেয়ার মার্কেট ধ্বংস করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেনÑ শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্তে এমন কিছু মানুষের নাম এসেছে তাদের হাত আমার থেকেও লম্বা।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: