ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘড়ির কাঁটা ঠিক আছে, বদলে গেছে প্রতিদিনের জীবন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২০ মে ২০১৮

ঘড়ির কাঁটা ঠিক আছে, বদলে গেছে প্রতিদিনের জীবন

মোরসালিন মিজান ॥ হঠাৎ বদলে গেছে রোজনামচা। গত কয়েকদিন আগে যা ছিল, যেমন ছিল, এখন তার বিপরীত চিত্র। প্রতিদিনের জীবন থেকে কিছু জিনিস বাদ পড়েছে। আবার যোগ হয়েছে অনেক কিছু। হ্যাঁ, দ্রুত এ পরিবর্তন রোজার প্রভাবে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মাহে রমজান। আজ রবিবার তৃতীয় দিন। এরই মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রোজার প্রভাব। শহর ঢাকা পেয়েছে নতুন চেহারা। এখন ঘড়ির কাঁটা ঠিক থাকলেও, খাওয়া ঘুম জেগে ওঠা সব হচ্ছে নতুন নিয়মে। শেষ রাত সাধারণত গভীর ঘুমের হয়। মহাবিপদ না হলে কেউ বিছানা ছাড়তে চান না। অথচ রমজানে হঠাৎ জ্বলে উঠছে ঘরের বাতি। পরিবারের সদস্যরা অসময়ে চোখ মুখ ধুয়ে একসঙ্গে বসে সেহ্রি খাচ্ছেন। কোন কোন পাড়া মহল্লায় ডাকাডাকির একটি রীতি চালু আছে। অপেক্ষাকৃত তরুণরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সেহ্রি খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছেন। এভাবে রাতেই তৈরি হচ্ছে দিনের আবহ। এ প্রসঙ্গে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কাশিদা দলের কথা বলতে হয়। এই দলের সদস্যরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাস্তায় নামছেন। মহল্লার ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে সুরেলা কণ্ঠে রোজাদারদের ডাকছেন। ঘুম থেকে ওঠার আহ্বান জানাচ্ছেন। এদিকে, রাতে সজাগ থাকার কারণে ঘুম ভাঙছে দেরি করে। সাধারণ সময়ের অনেক পরে সচল হচ্ছে শহরের রাস্তাঘাট। রোজার উপলক্ষে যথারীতি বদলে গেছে সরকারী অফিস আদালতের সময়সূচী। এখন সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সকাল ৯টায় শুরু হয়ে চলছে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। সুপ্রীমকোর্ট, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ রেলওয়ে, পোস্ট অফিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের সুবিধামতো সময়সূচী নির্ধারণ করে নিয়েছে। বদলেছে বেসরকারী অফিসের সময়ও। কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় সর্বত্রই একটা তড়িঘড়ি অবস্থা। অল্প সময়ের মধ্যে নির্ধারিত কাজ শেষ করতে গিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অফিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাস্তা ঘাটেও ব্যাপক ছোটাছুটি দৃশ্যমান হচ্ছে। রমজানে দুপুরের পর থেকেই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আগে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কথা ভাবা যেত না। বর্তমানে অন্য নিয়ম। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ কেউ মিস করতে চাইছেন না। অবশ্য এবার রোজার প্রথম দুই দিন অফিস করতে হয়নি। শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। বহু মানুষ বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটিয়েছেন। শনিবার শহর ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা ঘাট বেশ ফাঁকা। যানজট নেই বললেই চলে। অন্যান্য দিন দুপুর বেলায় রেস্তরাঁগুলোতে মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এদিন তেমন কিছু চোখে পড়েনি। ফুটপাথের চায়ের দোকানগুলো খোলা থাকলেও চারপাশে কালো কাপড় দিয়ে আড়াল করা হয়েছে। ফলে চেনা আড্ডাটি আর চোখে পড়ছে না। একই ফুটপাথে বিক্রি হচ্ছে ইফতার সামগ্রী। ছোলা পেঁয়াজু ভাজা হচ্ছে চোখের সামনে। সন্ধ্যার আগেই সাজিয়ে রাখা হচ্ছে ইফতারের প্লেট। শসা লেবু ইত্যাদির আলাদা কদর এখন। দোকানিরা সব নিয়ে হাজির। টুকটাক কেনাকাটা করতে করতে বাসায় ফিরছিলেন রোজাদাররা। ইফতারের পরে আরও ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল রাস্তা ঘাট। এবারও শহরের প্রায় সব মসজিদে খতমে তারাবির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন বাড়িতে, এপার্টমেন্ট হাউসের ছাদে গ্যারেজে দীর্ঘ নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। এ নিয়েও এ ধরনের ব্যস্ততা লক্ষণীয়। রোজা মানেই ঈদের প্রস্তুতি। এখন মোটামুটি প্রথম রোজা থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। মার্কেট শপিংমলগুলোতে নতুন পোশাকের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতারাও ঢুঁ মারতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে অন্যরকম দিনযাপন। বদলে যাওয়া সময়। রমজানের একমাস এই দৃশ্যটি অভিন্ন থাকবে।
×