ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লক্ষ্য সমুদ্রে হুমকি মোকাবেলায় বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো

বিতর্কিত দ্বীপে চীনা বোমারু বিমান

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২০ মে ২০১৮

বিতর্কিত দ্বীপে চীনা বোমারু বিমান

চীনের বিমান বাহিনীর কয়েকটি বোমারু বিমান সম্প্রতি এক মহড়ার সময় দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপের বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, চীন সাগরের ওই অঞ্চলে নিজের সামরিক প্রভাব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়েছে বেজিং। গার্ডিয়ান। চীনা বিমান বাহিনীর বোমারু বিমানের দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপে অবতরণের খবর প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল। শুক্রবার চীনা বিমান বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডিভিশন কমান্ডার হাও জিয়াঙ্কের নেতৃত্বে কয়েকটি এইচ-সিক্সকে বোমারু বিমান চীন সাগরের বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। জিয়াঙ্কে কোন ডিভিশনের প্রধান বা বিমানগুলো কোথায় অবতরণ করেছে তা জানানো হয়নি। দক্ষিণ চীনের কোন সামরিক ঘাঁটি থেকে সেগুলো যাত্রা শুরু করেছিল সেটিও প্রকাশ করা হয়নি। দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপের বিমানবন্দরে টেক অফ মহড়ায় বিমানগুলো অংশ নেয়। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিমান বাহিনীর বোম্বার ইউনিট যেন দ্বীপগুলোকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে সেই উদ্দেশে তাদের অভ্যস্ত করতেই এ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। মহড়ায় চীনা বিমান বাহিনীর যে ডিভিশন অংশ নিয়েছে তারা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ চীন সাগর ও এর আশেপাশের দ্বীপগুলো টহল দেয়ার কাজে নিয়োজিত আছে। পিএলএ এয়ারফোর্স কমান্ড কলেজের গবেষক ওয়াং মিংলিয়াংয়ের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোতে টেক অফ ও ল্যান্ডিং মহড়া সমুদ্রে নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলায় বিমান বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়াবে। এ্যারোস্পেস নলেজ পত্রিকার সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো চীনা বিমান বাহিনীর বোমারু বিমানের নিয়ন্ত্রণে এসে গেলে চীনের সমুদ্র প্রতিরক্ষার সীমা অনেক বেড়ে যাবে। তখন চীনের ভৌগলিক সীমার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী যে কোন শক্তিকে সহজে মোকাবেলা করতে পারবে বেজিং। দেশটির সরকারী তথ্য সূত্র মতে দক্ষিণ চীন সাগরের অন্তত চারটি বড় বিমানবন্দর রয়েছে। মেইজি ও ইয়াংশু প্রবাল প্রাচীরের ওপর অবস্থিত ইয়ংজিং, জিশা ও ঝুবি দ্বীপ এবং নানশা দ্বীপের ওপর বিমানবন্দরগুলো অবস্থিত। বিমানবন্দরগুলো এত বড় যে বিমান বাহিনীর এয়ারক্রাফট তাতে অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে। ২০১৬ সালে চীনের এয়ারলাইন্সগুলোর বিশাল যাত্রীবাহী বিমানগুলো মেইজি, ঝুবি ও ইয়াংশু প্রবাল প্রাচীরের ওপর অবস্থিত বিমানবন্দরগুলোতে টেক অফ ও ল্যান্ডিং করে। এইচ-সিক্সকে পিএলএ’র সবচেয়ে আধুনিক বোমারু বিমান। এ বিমানগুলো সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল বহণক্ষম। সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল দিয়ে ভূমিতে বা সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজ টার্গেট করে নিখুঁতভাবে আঘাত হানা যায়। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, চীনের ওই বোমারু বিমানগুলো সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়েছে। অন্যদিকে তাদের সি- জে ১০ সিরিজ সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের পাল্লা দেড় হাজার কিলোমিটার। এর অর্থ চীন তাত্ত্বিকভাবে ওই বিমানের সহায়তায় ৫ হাজার কিলোমিটার দূরে ক্ষেপণাস্ত্রেও আঘাত হানতে পারে। দেশটির নেতৃস্থানীয় বিমান উৎপাদনকারী সংস্থা এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন অব চায়না এখন আরও উন্নতমানের বোমারু বিমান তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছে। এসব বিমানের দেশটির আঘাত হানার সীমা ১২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসারিত করবে এবং ওগুলো ২০ মেট্রিক টন পর্যন্ত বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারবে। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবাল প্রাচীরের ওপর চীন এক গুচ্ছ কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। তবে সাগরের ওই অঞ্চলকে আরও অনেক দেশ নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। কৃত্রিম দ্বীপগুলোতে চীন সামরিক স্থাপনা তৈরি করছে বলে স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে আগেই ধারণা পাওয়া গিয়েছিল।
×