ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ

অভিমত ॥ জামায়াত-শিবিরের ‘তাকিয়া’ কৌশল!

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২০ মে ২০১৮

অভিমত ॥ জামায়াত-শিবিরের ‘তাকিয়া’ কৌশল!

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামী। আর ওই বিরোধিতা করার কারণে ১৯৭১ সাল পরবর্তী সময়ে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পৈশাচিক নারকীয়ভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আর তৎপরবর্তী শাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে এক নতুন ‘রাজনৈতিক দল বিধিমালা’ তৈরির মাধ্যমে এই নিষিদ্ধ জামায়াতের রাজনীতিকে আবার উন্মুক্ত করে দেয়। বর্তমান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান ১৯৭১ সালের পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্রসংঘ’-এর নেতা ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ডাঃ শফিক ১৯৭২ সালে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) গঠন হলে সিলেট জেলা জাসদের প্রভাবশালী ছাত্রনেতা বনে যান। কিন্তু যখন ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান ‘রাজনৈতিক দল বিধিমালা’ জারি করে জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলে ডাঃ শফিক জামায়াতের রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং জামায়াতের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ডাঃ শফিকের জাসদের রাজনীতিতে ছিল জামায়াত ইসলামীর ‘তাকিয়া’ পদ্ধতির আওতায় রাজনীতির অংশ। জামায়াত-শিবির নিজেরা তাদের রাজনৈতিক অনুকূল পরিবেশের সময়টাতে সাংগঠনিকভাবে যেমন ‘তাকিয়া’ পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে, তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের লক্ষ্যে, ঠিক তেমনি রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশে এই পদ্ধতি আরও ব্যাপকহারে প্রয়োগ করে থাকে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠনের দুটি ভাগ একটি ইসলামী ছাত্রশিবির, অপরটি ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। জামায়াতে ইসলামের মাস্টারমাইন্ডগণ তাদের ছাত্ররাজনীতি যেন বর্তমান বৈরি পরিবেশে প্রসারিত হয়, সে জন্য তাদের এই ‘তাকিয়া’ পদ্ধতিভিত্তিক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। মওদুদীবাদী সংগঠন জামায়াত ইসলাম বর্তমানে এই পদ্ধতিতে সংগঠন পরিচালনা করে আসছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালের পল্টন মোড়ে আন্দোলনের পর থেকে এই পদ্ধতিতে সংগঠনের প্রসার দৃঢ় করার বিষয়ে গভীর মনোনিবেশন করেন এবং বাস্তবায়নে অগ্রসর হন। এই ‘তাকিয়া’ পদ্ধতি আরও বেড়ে যায় শেখ হাসিনা সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের একে একে বিচার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে এই ‘তাকিয়া’ পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অর্গানে এরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছে, তাতে জামায়াত নিজস্ব লোকবলকে কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল করছে, এবং বিভিন্ন দলের মাঝে বিশেষ করে তাদের বিপরীত মতাদর্শ অন্যদলের অঙ্গ সংগঠনে এরা ‘তাকিয়া’ভিত্তিক ঢুকে নিজেদের রাজনীতির স্বার্থসিদ্ধি করে যাচ্ছে। এদের আচরণ এমন যে, এরা জাদুকরের মতো চোখের সামনে ধুলা দিতে দক্ষ। কাউকে বুঝতে দেবে না যে আপনার আপন না এরা। অথচ তাদের চরম শত্রু আপনি! বরং আপনার প্রতি যত ধরনের তোষামোদপটু হওয়া যায়, ঠিক ততধরনের তোষামোদপটু হতে এদের দ্বিধা নেই এবং হয়েও থাকে। বলতে গেলে এটাই তাদের মূল হাতিয়ার। এমন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে এসব ‘তাকিয়া’ ভিত্তিক অনুপ্রবেশ নিশ্চিত হয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা। শুধু তাই নয়, প্রগতিশীল রাজনীতির ভেতর এই জামায়াত-শিবিরের ‘তাকিয়া’ ভিত্তিক লোকদের অবস্থান অনেকটা পাকাপোক্ত। বিভিন্ন প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানে এদের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। যেমন- বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ও পত্রিকাতে ‘তাকিয়া’ ভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছে এরা। ঠিক এ রকম পাকাপোক্ত হওয়ার কারণে এরা বড় ধরনের সামাজিক আন্দোলন করতে চায় এবং এটাই স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তির মূল লক্ষ্য। আর পাশাপাশি তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধের জন্য যে ফাঁসি দেয়া হয়েছে সেটার প্রত্যক্ষ প্রতিশোধ নেয়া। কোটাপ্রথাবিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়াটা হলো তাদের একটি প্রাথমিক এক্সপেরিমেন্ট। যেটার ধারাবাহিতা কোন এক সময় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়া এবং মওদুদীবাদ প্রতিষ্ঠা করা। কার্যত এই রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এহেন পরিপ্রেক্ষিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এই জামায়াতি ‘তাকিয়া’রা বিশেষ টার্গেট করে নিয়েছে। কেননা একদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের বিপরীত চিন্তা দর্শন নিয়ে চলে। বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চিন্তা, প্রগতিশীল চিন্তা, উন্নত সাংস্কৃতিক পরিবেশের মাধ্যমে পরিচালিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমান রাষ্ট্রক্ষমতায় অবস্থান করছে। সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতান্ত্রিক মূলনীতি। (সূত্র : ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র) সুতরাং এই মূলনীতি বাস্তবায়ন ও রক্ষা একমাত্র স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুনিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগে মুজিব আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাঙালী জাতিসত্তার জাতীয়তাবাদ খুব মনেপ্রাণে ধারণ করে এমন ছাত্রনেতৃত্ব অতি প্রয়োজন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। নতুবা রক্তের মূল্যে কেনা বিজয়কে বিদ্রƒপ বিদ্ধ হতে হবে প্রতিনিয়ত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিদ্রƒপ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, অসম্মানিত হতে হবে পিতা মুজিব আদর্শের সৈনিকদেরকে। আর অন্যদিকে পৈশাচিক উল্লাসে নাচবে ওই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের ‘তাকিয়া’ নামক অপশক্তি। লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা
×