ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেজাল দুধ

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২০ মে ২০১৮

ভেজাল দুধ

দেশে প্যাকেটে বাজারজাতকৃত পাস্তুরিত তরল দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়। ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। দুগ্ধ খামার থেকে শুরু করে বিক্রির দোকান পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে দুধে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদ-ে এর যোগ্য নয়। এই দুধ উচ্চ তাপে ফুটিয়ে না খেলে তা বিপজ্জনক হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর পাশাপাশি দুধের পুষ্টিমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তদুপরি পেটের পীড়া, বদহজম, আমাশয় নানা রোগ-ব্যাধির সংক্রমণ হতে পারে। দুধে ভেজালের বিষয়টি তো আছেই। সত্যি বলতে কি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি একরকম ওপেনসিক্রেট। দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, তরিতরকারি, শাক-সবজি সর্বত্র ভেজালে ভেজাল। পণ্য অনুযায়ী কার্বাইড, ফরমালিন, তুঁতে, হলোফেন এমনকি ধোঁয়া ও বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার সুবিদিত। যে কারণে পণ্যমান রয়েছে প্রবল ঝুঁকিতে। কৃত্রিম দুধ ও ডিম নিয়েই নানা কথা শোনা যায়। ভেজালবিরোধীরা অভিযানের নামে মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ছোট-বড় বিক্রেতাদের জেল জরিমানা করা হলেও ভেজালের উপদ্রুব কমছে না কিছুতেই। চলতি রমজানে বিবিধ নিত্য ভোগ্যপণ্যের বিপুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভেজালের উৎপাত যে আরও বাড়বে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেশে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সঙ্কট রয়েছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম- মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতি সর্বজনবিদিত। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। জাতীয়ভাবে তরল দুধের প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। ভেজাল তো আছেই দৈনন্দিন মাংসের চাহিদা মেটাতে প্রধানত প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি, ততোধিক চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসে গবাদিপশু। পশুখাদ্যের দামও অত্যধিক। তবে বর্তমানে দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হওয়ায় গরু আমদানি প্রায় বন্ধ তথা সীমিত হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে দুধ-ডিম-মাংসের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সুষ্ঠু ও সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি পরকল্পনা নিয়ে আমাদের আরও বহুদূর অগ্রসর হতে হবে। দেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়; বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। সাড়ে ১২ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে জনসাধারণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে। বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনে এই সাফল্যের প্রশংসা করা হয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও। এসবই ডিজিটাল কৃষির অবদান। বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ, ফল উৎপাদনে সপ্তম। আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে এই উৎপাদন আরও বাড়ানো যায়। এখন নজর দেয়া উচিত বিভিন্ন ও বহুমুখী খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং সংরক্ষণে। সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ, দুধ-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনও রয়ে গেছে। এদিকে সবিশেষ ও সমন্বিত দৃষ্টি দিতে হবে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে। সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পটি অত্যন্ত বাস্তবধর্মী ও গণমুখী। মূলত, এর মাধ্যমেই সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা ও সুষম খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হতে পারে। এ জন্য ব্যয়ও খুব বেশি হবে না। বরং চাই সুষ্ঠু, সমন্বিত ও বহুমুখী পরিকল্পনা। প্রয়োজনে আধুনিক সমবায় প্রথাও সংযুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক চাহিদা ও যোগাননির্ভর ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং বাজার ব্যবস্থা অপরিহার্য। তা হলেই বহুমুখী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি নিশ্চিত হবে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা।
×