ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে বোল্টনের সঙ্গে মতপার্থক্য

লিবিয়া মডেল অনুসরণ নয় ॥ উনকে ট্রাম্পের আশ্বাস

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ মে ২০১৮

লিবিয়া মডেল অনুসরণ নয় ॥ উনকে ট্রাম্পের আশ্বাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের ভাবনার বিরোধিতা করলেন। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসে তিনি এ বক্তব্য দেন। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসির। ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের অপারমানবিকীকরণের ক্ষেত্রে লিবিয়া মডেল অনুসরণ করা হবে না জানিয়ে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উনকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আগামী ১২ জুন সিঙ্গাপুরে যথাসময়ে কিমের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ পুর্নব্যক্ত করেন। গত সপ্তাহে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে জন বোল্টন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে লিবিয়া মডেল অনুসরণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে লিবিয়া পারমাণবিক অস্ত্রভা-ার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে বিস্মিত করে দিয়েছিলেন দেশটির নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি। পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃস্থাপিত হয়। এর আট বছর পর ন্যাটো সমর্থিত বিদ্রোহী ও আধা-সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন গাদ্দাফি। বিদ্রোহীদের হাতে আটক হওয়ার পর তাকে নির্মমভাবে হত্যাও করা হয়। বোল্টনের দেয়া লিবিয়া মডেলের উদাহরণ উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনকে আতঙ্কিত করতে পারে বলে তখনই ধারণা করেছিলেন পর্যবেক্ষকরা। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোল্টনের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে প্রতিক্রিয়াও পাঠায় পিয়ংইয়ং। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে কেবল উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগে চাপ দিতে থাকলে ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করা হতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন তারা। সিঙ্গাপুরের বৈঠক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সৃষ্ট টানাপোড়েন মেটাতে দক্ষিণ কোরিয়া সহযোগিতা করতে চাইলে পিয়ংইয়ং তাও প্রত্যাখ্যান করে। যদিও ওই বৈঠকটি যথাসময়েই হবে বলে আশা মার্কিন প্রেসিডেন্টের। যদি কিম পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হন তাহলে তার শাসন ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চয়তা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে লিবিয়া মডেল নিয়ে ভাবছি না আমরা। এমন এক চুক্তির কথা আমরা বিবেচনা করছি যেখানে কিম জং উন থাকতে পারেন। তিনি নিজের দেশেই থাকতে পারবেন। দেশ পরিচালনাও করতে পারবেন কিম। তার দেশ হয়ে উঠবে খুবই সমৃদ্ধ। কিমের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের কিছুই বদলায়নি বলেও জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া নিয়ে কিছু বদলেছে কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের এখনও কিছু বলা হয়নি। যদি বৈঠক না হয় তবে ঠিক আছে। আর যদি হয় সম্ভবত আমরা একটি সফল বৈঠক করতে যাচ্ছি। যদি আপনি গাদ্দাফির সঙ্গে ঘটা মডেলটির দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যে সেটি ছিল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসাত্মক। আমরা সেখানে যাব আর তাকে মেরে ফেলব। এখন সেই মডেল সেখানে কাজ করবে না। সম্ভবত আমরা একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি। আমি মনে করি কিম জং-উন খুব, খুব খুশি হবেন। বিষয়টি এখন কিম জং-উনের হাতে রয়েছে। তিনি কোথায় যাবেন তা তিনিই ঠিক করবেন। তিনি তার দেশ চালাচ্ছেন। তার দেশ খুব ধনী হবে। আমাদের প্রত্যাশা অনেক এবং তিনিও অনেক বেশি কিছু অবশ্যই আশা করেন। আমি মনে করি আমরা এখন একটি ভাল সম্পর্কের দিকে যাচ্ছি। সামনে আমাদের একটি বৈঠক আছে। সেখান থেকে কিছু একটা আসতে যাচ্ছে। তিনি সব ধরনের সুরক্ষা পাবেন, যা খুবই শক্তিশালী হবে। সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার মন্তব্যের অর্থ তিনি নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন। যিনি তার প্রশাসনের তৃতীয় পক্ষ। প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি মনে করি বোল্টন যখন ওই বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি এই বিষয়ে কথা বলছিলেন যে আমরা একটি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কেননা আমরা একটি দেশকে পুরোপুরি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে পারি না। আমারা সেটা পারবও না। সাবেক মার্কিন মধ্যস্থতাকারী ও জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির ইউএস-কোরিয়া ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো জোয়েল উইট বলেন, বৈঠকের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে এ ধরনের হুমকি দেয়ার সঠিক সময় নয় এখন। কোরীয় উপদ্বীপে চলমান অপারেশন ম্যাক্স থান্ডার নিয়েও সিউলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পিয়ংইয়ং। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের এ যৌথ সামরিক মহড়াকে উত্তরের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মহড়া আখ্যায়িত করে দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকও বাতিল করেছে তারা। দক্ষিণ কোরীয় কর্তৃপক্ষকে অপদার্থ ও কা-জ্ঞানহীন বলে অভিহিত করে দুই কোরিয়ার মধ্যে বিবদমান বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি না হলে আর কোন আলোচনা হবে না বলেও জানিয়েছে তারা। যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেয়া ও পক্ষত্যাগী একজনকে সিউল ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলিতে কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্যও দক্ষিণ কোরিয়ার সমালোচনা করেছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরীয় প্রধান আলোচক ও দেশটির শান্তিপূর্ণ পনরেকত্রীকরণ কমিটির চেয়ারম্যান রি সন-গোন জানান, উদ্ভূত এই মারাত্মক পরিস্থিতি যাকে কেন্দ্র করে উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ভেস্তে গেছে। সেটির কোন সমাধান না হলে আবারও সরাসরি আলোচনায় বসা আর কখনও সহজ হবে না।
×