ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গলাচিপা পৌর শহরে পানির সঙ্কট তীব্র, মাত্রাতিরিক্ত সংযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ মে ২০১৮

 গলাচিপা পৌর শহরে পানির সঙ্কট তীব্র, মাত্রাতিরিক্ত সংযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ বিদ্যুত নেই, পানি নেই। বিদ্যুত আছে, পানি আছে। তবে তা ফোঁটায় ফোঁটায়। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা শহরে বছরের পর বছর এভাবেই চলছে পৌরসভার পানি সরবরাহ। অতিরিক্ত সংযোগ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানির সঙ্কটে পৌরবাসী রীতিমতো দিশেহারা। অন্যদিকে, পানি সরবরাহে দাতা সংস্থার অর্থায়নে আরেকটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ চলছে। তবে তা অত্যন্ত ধীরগতিতে। এরই মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ এটি শীঘ্রই চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এরপরেও পানির চাহিদা মিটবে কি না, এ নিয়ে পৌরবাসীর যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। এর ওপরে আবার পানির দাম দফায় দফায় বেড়েই চলছে, তা নিয়েও পৌরবাসী ক্ষুব্ধ। প্রথম শ্রেণীর গলাচিপা পৌরসভায় পানি সরবরাহ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ৫শ’ কিউবিক ধারণ ক্ষমতার একটি মাত্র ওভারহেড ট্যাঙ্কির সাহায্যে পানি সরবরাহ শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, এ ওভারহেড ট্যাঙ্কের সংযোগ ক্ষমতা মাত্র দেড় হাজার। অথচ এরই মধ্যে চার হাজারেরও বেশি পানির সংযোগ দেয়া হয়ে গেছে। বর্তমানে আরও বেশকিছু সংযোগের আবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়ে আছে। মাত্রাতিরিক্ত সংযোগ দেয়ায় গলাচিপা পৌর শহরে পানির সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে। দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা পাম্প মেশিন চালু রেখেও পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপরে বিদ্যুত চলে গেলে তৎক্ষণাত পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আবার বিদ্যুত এলেও পানি সহসা আসে না। আর এলেও তা ফোঁটা ফোঁটা পড়ে। অর্থাৎ পানির গতি থাকে না। গলাচিপা শহরে আগে প্রচুর ডোবা ও পুকুর ছিল। শহরের মাঝখানে ছিল প্রশস্ত উলানিয়া খাল। এসব পুকুর, ডোবা ও খাল পানির প্রাকৃতিক উৎস হিসেবে কাজ করত। কিন্তু খালটি এখন পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। একই ভাবে অধিকাংশ পুকুর-ডোবাও লোকজন ভরাট করে নিয়েছে। এখন পৌর কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানিই শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে। ঘর-গেরস্থালি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক, সব কাজেই সরবরাহের পানি শেষ অবলম্বন। কিন্তু প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ না থাকায় পৌরবাসীর জীবন-যাপন দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গরমের সময়ে পানির সঙ্কটে মানুষ হাসফাঁস করছে। সূত্র আরও জানায়, পানির এ সঙ্কট মেটাতে পৌর কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে দাতা সংস্থা জাইকার মাধ্যমে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পৌর শহরের সরকারী ডিগ্রী কলেজ মাঠে আরেকটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে। ১২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওভারহেড ট্যাঙ্ক ছাড়াও পাম্প হাউস, পাইপলাইন, বাউন্ডারি ওয়াল, পাম্প মেশিন স্থাপন ও বিদ্যুত সংযোগসহ অন্যান্য নির্মাণ কাজ গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শেষে হস্তান্তরের তারিখ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা শেষ হয়নি। যদিও কর্তৃপক্ষ এটির নির্মাণ কাজ শীঘ্রই শেষ হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু একই ধারণক্ষমতার অর্থাৎ পাঁচ শ’ কিউবিক মিটার পানির এ ওভারহেড ট্যাঙ্ক চাহিদা কতটা মেটাতে পারবে, এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে সংশয় রয়েই গেছে। কারণ এরইমধ্যে মাত্রাতিরিক্ত সংযোগ দেয়া হয়ে গেছে এবং বর্তমানে বেশ কিছু আবেদন সংযোগের পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে, পানি সরবরাহের শুরুতে আবাসিক সংযোগে প্রতি ইউনিট পানির দাম ৮ টাকা করা হলেও পরে তা দু’ দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ ১৩ টাকা এবং বাণিজ্যিক সংযোগে ১৫ টাকার প্রতি ইউনিট ২০ টাকা করা হয়। পানির চাহিদা মেটাতে না পারলেও এভাবে দফায় দফায় পানির দাম বাড়ানোয় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার নিয়েছে। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য দুর্গতির সৃষ্টি করেছে। জানা গেছে, গলাচিপা পৌরসভার রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে পানি সরবরাহ। প্রতিমাসে পানি সরবরাহ থেকে অন্তত ৯ লাখ টাকা আদায় হয়। বিদ্যুত ও কর্মচারীদের বেতন দেয়ার পরে গড়ে ৬ লাখ টাকা পৌর তহবিলে জমা হয়। রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হওয়া সত্ত্বেও পানি সরবরাহ ব্যবস্থার নেই কাক্সিক্ষত উন্নয়ন। পানি সরবরাহের সঙ্কট প্রসঙ্গে পৌরসভার পানি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আবদুল আওয়াল জানান, নতুন ওভারহেড ট্যাঙ্ক শীঘ্রই চালু হবে। এর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। এটি চালু হলে পানি সরবরাহের যথেষ্ট উন্নতি ঘটবে। তবে শহরে আরও একটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। পানির দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাতাসংস্থার নির্দেশেই পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে পৌর কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই।
×