ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে ৬০০ মিটার সড়ক নির্মাণে ৫ বছর পার

মাঝপথে থমকে আছে নগর সড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৯ মে ২০১৮

মাঝপথে থমকে আছে নগর  সড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ‘রানীবাজার-সাগরপাড়া’ সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ ঝুলে থাকায় কয়েক বছর ধরে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন মহানগরীর একাংশের মানুষ। মাত্র ৬০০ মিটার এ সড়ক নির্মাণ কাজ ৫ বছরের সম্পন্ন হয়নি। ফলে এই মুহূর্তে রাজশাহী নগরবাসীর সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্মাণাধীন রানীবাজার-সাগরপাড়া সড়ক উন্নয়ন কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বাস্তবায়নাধীন এ সড়কটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। অপ্রশস্ত এ সড়কটি ভেঙ্গে ৪২ ফুট প্রস্থের নির্মাণ কাজ শুরু হয় সেই সময়। গত বছরের (২০১৭) ডিসেম্বরে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও কাজটি শেষ হয়নি। কবে নাগাদ এ কাজ সম্পন্ন হবে এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের দেন দরবারের কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে এ সড়কের কাজ বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিংহভাগ কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত তারা কাজটি সিটি কর্পোরেশনের কাছে সারেন্ডার করেছে। এ কাজটি তারা আর সম্পন্ন করবে না বলেও সিটি কর্পোরেশনকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দাবি শীঘ্রই নতুন করে এ সড়কটির কাজ শুরু করা হবে। এ সড়কটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ ট্রেডিং কর্পোরেশনের একজন পার্টনার মোস্তাক আহমেদ। তিনি জানান, তারা চুক্তি অনুযায়ী ঠিকমতোই কাজটি করছিলেন। সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্নের জন্য এগুচ্ছিলেন। তবে গত রমজান মাসে যখন রাস্তায় প্রাইমকোটের কাজ চলছিল তখন হঠাৎ করে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কাজটি বন্ধ করে দেন। তারা ৮০ ভাগ কাজ করলেও এরপর থেকে বন্ধ রেখেছেন। এখন তারা আর এ কাজটি করতে চান না। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে এ সড়কটি নির্মাণকালীন সময় দুটি বর্ষা পেরিয়েছে। সামনে আবারও বর্ষা আসছে। এরই মধ্যে ৬০০ মিটারের এ রাস্তাটি খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। ওই সড়ক দিয়ে এখন পায়ে হেঁটেও চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সড়ক নির্মাণে রাস্তার ওপর ফেলা ইট-খোয়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। তাই সড়ক নির্মাণ করতে হলে আবার নতুন করে ইট-খোয়া ফেলতে হবে। পরিকল্পনা মতে, এরপর সড়কের মাঝে বসাতে হবে ডিভাইডার। পরে হবে কার্পেটিং। এ সমস্ত কাজের সবই আটকে আছে এক বছর ধরে। এখন একটু বৃষ্টি হলে রাস্তাটির কোন কোন স্থানে জমে যাচ্ছে হাঁটুপানি। ফলে দুঃসহ দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণাধীন রাস্তাটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৬০০ মিটার। অথচ পাঁচ বছরেও নির্মাণ কাজ কেন শেষ হচ্ছে না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সড়ক নির্মাণের এই প্রকল্পের পরিচালক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, সড়কটি নির্মাণ করার জন্য ওই এলাকার প্রায় ৯০টি বাড়ি ভেঙ্গে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটিও। এ সব কাজেই বেশ সময় চলে গেছে। তিনি বলেন, প্রায় তিন বছর আগে সড়ক নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ চলছিলই। তবে ইট-খোয়া ফেলার পর কার্পেটিংয়ের আগে এবার বর্ষা চলে আসে। এ জন্য কাজ বন্ধ রাখা হয়। তিনি বলেন, এ কাজটি করতে নতুন করে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খুব শীঘ্রই এ সড়কের কাজ শুরু হবে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে সরেজমিনে ওই রাস্তায় গিয়ে দেখা গেছে, কার্পেটিংয়ের জন্য রাস্তায় ফেলা ইট-খোয়াগুলো বেশিরভাগ জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ইটের টুকরো। রাস্তাটির প্রায় সব জায়গায় তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। সেই গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। গর্তের এই পানি মাড়িয়েই চলছে গাড়ি, চলছেন পথচারীরা। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। দীর্ঘ সময় ধরে রাস্তার এমন দশায় ক্ষুব্ধ সাগরপাড়া, তুলাপট্টি, রানীবাজারসহ আশপাশের মহল্লার বাসিন্দারা। তুলাপট্টির বাসিন্দা ও একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক আজিজুল ইসলাম বলেন সড়কটি নির্মাণ নিয়ে এত দুর্ভোগ হচ্ছে যে নিজের বাড়ি না হলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতাম। শুধু যাতায়াতের ভয়ে এলাকায় কোন ভাড়াটিয়াও আসতে চাইছে না। এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, ‘এই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এ রাস্তায় এখন তাদের বিপদ ডেকে এনেছে। রিক্সায় চড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও যেতেই এখন ভয় লাগে। ছোট-বড় গর্তে রিক্সার চাকা পড়লে কোমর ব্যথা হয়ে যায়। আবার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ইট-খোয়ার কারণে হেঁটে বের হওয়ারও উপায় নেই। এলাকাবাসী দ্রুত সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানান। রাসিক সূত্রে জানা গেছে, নগর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে রানীবাজার-সাগরপাড়া সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অংশ হিসেবে এখন প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করলেও কার্পেটিং ও ড্রেসিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তারপরেও রানীবাজার-সাগরপাড়া সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দাবি, সড়কটির নির্মাণ নিয়ে রাসিক মেয়র ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দেন দরবারের কারনে আটকে আছে এ কাজটি। রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, খুব শীঘ্রই এ সড়কের কাজ শেষ হবে। তবে রাস্তাটিতে এখন নগরবাসীর দুর্ভোগ হচ্ছে স্বীকার করে এই প্রকৌশলী বলেছেন, উন্নয়ন কাজ চলাকালে কিছুটা দুর্ভোগ হবেই।
×