ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালিত

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৯ মে ২০১৮

নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাদুঘর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের (আইসিওএম) আহ্বানে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৮ মে পৃথিবীব্যাপী পালন করা হয় আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে দিবসটি উপলক্ষে একটি প্রতিপাদ্য প্রদান করে থাকে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বহুধা সংযুক্ত জাদুঘর, নতুন প্রয়াস, নতুন প্রজন্ম’ ধারণাকে উপজীব্য করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালন হয় শুক্রবার। জাতীয় জাদুঘরের আয়োজন ॥ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিকেলে আয়োজন করা হয় ‘শিকড় সন্ধানী গবেষক ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী’ শীর্ষক সেমিনার। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও গবেষক আলী ইমাম। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. আবদুল মোমিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, হারিয়ে যাওয়া নিদর্শন সংগ্রহ করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তুলে ধরার জন্য জাদুঘরের সৃষ্টি। শেকড়ের সঙ্গে পরিচয় ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে জাদুঘর। সঠিক ইতিহাস চর্চায় এটা আমাদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব এবং জাদুঘর চর্চার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও মৌলবাদকে প্রতিহত করে আগামী প্রজন্মের কাছে হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তবেই আমরা পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। সেমিনারের মূল প্রবন্ধকার আলী ইমাম বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন জাদুঘর বিশারদ, মূর্তিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ইতিহাসবিদ, মুদ্রাতাত্ত্বিক, প্রাচীন হস্তলিপি বিশারদ, পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক, সর্বোপরি দেশপ্রেমিক বাঙালী গবেষক। ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯১৪ সালে তিনি প্রথম কিউরেটর নিযুক্ত হন। মৃত্যুর আগে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। নিজে প্রতœবস্তু সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, ছবি তোলা, প্রদর্শনী ও প্রকাশনা করতেন। অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালীর জীবনে কখনও আর্থিক সাচ্ছল্য ছিল না। তিনি এক শ’ তেরো টাকায় চাকরি শুরু করেন এবং মৃত্যুকালীন তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল দুই শ’ টাকা। ঢাকা জাদুঘর তৈরিতে নলিনীকান্তের অবদান অনস্বীকার্য। তার মতো বহুবিধ জ্ঞানের অধিকারী মানুষ এখনও বিরল। জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ড. এনামুল হক বলেন, নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। দূরদর্শী মানুষ ছিলেন নলিনীকান্ত। আরবী মুদ্রা অনুবাদ করার জন্য আরবী শিখেছিলেন। মানুষ এ পন্ডিত ব্যক্তিকে ভুলতে বসেছিল। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসে এই মহান পন্ডিত ব্যক্তিকে স্মরণ করার জন্য তিনি জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, আগামী প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশ- বিদেশের নানা তথ্য ঘরে বসে জানতে পারছে ফলে তারা জাদুঘরবিমুখ হয়ে পড়ছে। জাদুঘরকে তথ্যপ্রযুক্তির নানা উপকরণ দিয়ে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে; যার মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম জাদুঘর সম্পর্কে আগ্রহী হবে। শুরুতে আলী ইমামের নির্মাণে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর ওপর তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ শওকত আলীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সেমিনার। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ॥ গান, আবৃত্তি আর আলোচনানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উদ্যাপন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব মিলনায়তনে এদিন সকালে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সিকদার জুলকারনাইন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করে ঢাকা স্বরকল্পন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
×