ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম রোজায় মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় প্রার্থীদের

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ১৯ মে ২০১৮

প্রথম রোজায় মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় প্রার্থীদের

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, গাজীপুর ও নুরুল ইসলাম, টঙ্গী ॥ আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এবারের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের স্থগিতাদেশের বাধা উচ্চ আদালতের মাধ্যমে দূর হওয়ার পর এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী আগামী ১৮ জুন হতে দ্বিতীয়বারের মতো এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু করবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা আরও একমাস পর হতে শুরুর কথা থাকলেও কোন প্রার্থীই বসে নেই তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে। প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন কৌশলে গণসংযোগ ও সভা করছেন। কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজেদেরকে তুলে ধরছেন ভোট পাওয়ার আশায়। শুক্রবার প্রার্থীগণ ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। এবারের রমজানের প্রথমদিন জুমাবার হওয়ায় এদিন প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় ও প্রার্থনা করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। এ সময় তারা মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেছেন এবং ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। অনেক প্রার্থী ভোটারদের বাড়ি, শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিড় জমিয়েছেন এবং নানা আশার বাণী শুনিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাত করে এদিনটি ব্যস্ত কাটিয়েছেন। প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় কয়েকদিনের নিস্তবদ্ধতা কাটিয়ে আবারও সরব উঠছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবারের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ১৫ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে আদালতে দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ৬ মে হাইকোর্ট গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সকল প্রকার কার্যক্রম। নগরীর সর্বত্র নিস্তব্ধতা চলে আসে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। ভোটাররাও নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েন। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী। শুনানি শেষে ১০ মে উচ্চ আদালতে ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন। এ আদেশের প্রেক্ষিতে চারদিন নিস্তব্ধতার পর উজ্জীবিত হয়ে উঠে গাজীপুর সিটি’র নির্বাচনী পরিবেশ। ভোটারদের মাঝেও উৎফুল্লতা দেখা দেয়। নির্বাচনে সকল প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। সরব হয়ে ওঠে পুরো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা ও ভোটাররা। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীগণসহ তাদের কর্মী-সমর্থক ও নগরবাসীর মধ্যে উদ্দীপনা ফিরে আসে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আদালতের স্থগিতাদেশের বাধা দূর হওয়ার পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সকল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আবারও নির্বাচনী মাঠে নামতে শুরু করেন। উচ্চ আদালতের ওই আদেশের প্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা আগামী ১৮ জুন হতে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করার সময় বেঁধে দেয়া হলেও অধিকাংশ প্রার্থী ও সমর্থকরা ওই বিধি-নিষেধ মানছেন না। প্রতিদিনই কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রার্থীরা বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন এবং গণসংযোগ ও বৈঠক করছেন। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও সবার দৃষ্টি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) দিকে। হেভিওয়েট এ দু’প্রার্থী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভোটার ও কর্মী সমর্থকরা ভিড় জমাচ্ছেন। কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে জনসমাবেশে পরিণত হয়। তবে নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে নেই অন্য ৫ মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলররাও। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে নির্বাচনী আচরণবিধিকে এড়িয়ে নানা কৌশলে তারাও হন্যে হয়ে ছুটছেন ভোটারদের কাছে। ইতোমধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তার ১৯ দফা এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী কাজী রুহুল আমিন তার ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করলেও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেননি। ভোটারদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম ॥ এবারের রমজানের প্রথমদিন শুক্রবার হওয়ায় নামাজ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এবং ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (নৌকা) এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। এদিন সকালে তিনি কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে ছয়দানাস্থিত তার বাসায় বৈঠক করেন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। তিনি দুপুরে সালনাস্থিত সালনা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং সবার কাছে দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন। নামাজ শেষে তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করে তাদের খোঁজ খবর নেন। সন্ধ্যায় তিনি মহানগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে মাস্টারবাড়িতে জামিয়াতুল উলুমীয়া ইসলামিয়া মাদরাসায় ইফতার করেন। এ সময় মাদরাসার প্রধান মুফতি নুরুল ইসলাম ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ দফতর সম্পাদক মাজহারুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের জন্য ২৬ জুনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যায়-অপরাধ ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধেÑ জিহাদে শরিক হওয়ার আহ্বান হাসান উদ্দিন সরকারের ॥ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার নগরীর বোর্ড বাজার এলাকায় হাজী মহর খান ওয়াকফ এস্টেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন এবং ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, নেতৃত্বের দুর্বলতা ও অভিভাবক সুলভ শাসনের অভাবে সমাজ আজ চরমভাবে অধঃপতন হচ্ছে। মাদকের ভয়াল আগ্রাসনে আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। হাল জামানায় মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ সমাজ ধ্বংসের যাবতীয় উপকরণ সহজলভ্য করে দেয়া হয়েছে। চোখের সামনে অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে অথচ কেউ প্রতিবাদ করছে না। অন্যায়-অপরাধ ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সরাসরি জিহাদে শরিক হওয়ার চেয়েও বেশি ফজিলতের বলে তিনি মন্তব্য করেন। এর আগে মসজিদের খতিব আব্দুর রাহিম আল-মাদানী মাহে রমজানের তাৎপর্য ও সমসাময়িক বিষয়ে বয়ানের একপর্যায়ে হাসান উদ্দিন সরকারকে নিজের কেস পার্টনার উল্লেখ করে বলেন, পিতৃতুল্য হাসান উদ্দিন সরকারের সঙ্গে জেল হাজতে পরিচয় ও কথা হয়েছে।
×