ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী ও সহযোগী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ মে ২০১৮

চট্টগ্রামে র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী ও  সহযোগী  নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। নগরীর যেখানেই ঘনবসতি সেখানেই মাদকের হাট বসছে। নগরীর বরিশাল কলোনি মাদকের হাট হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেট হলেও অভিযানের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও মাদকের হাট বসার রেকর্ড রয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সদরঘাট থানাধীন মাদকের আখড়া হিসেবে খ্যাত বরিশাল কলোনিতে র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও ১২ মামলার মামলার আসামি হাবিবুর রহমান ওরফে মোটা হাবিব নিহত হয়েছে। একই অভিযানে হাবিবের সহযোগী মোশারফও নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত তিনটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদ ও মাদক বিক্রির টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে প্রকাশ পেয়েছে, চট্টগ্রামকে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন অপরাধের উৎপত্তিস্থল মাদকের হাট। মাদক ব্যবসায়ীদের কারণেই চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা যত্রতত্র খুন খারাবিসহ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ রাখছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কারণে বিভিন্ন স্থানে শুধু মাদক ব্যবসাই নয় মাদকের বিনিময়ে অস্ত্রও বেঁচাকেনা হচ্ছে। ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের মাধ্যমেও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চালান পাচার হচ্ছে। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট থানাধীন কুখ্যাত মাদক স্পট ‘বরিশাল কলোনি’। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বরিশাল কলোনিতে অভিযান চালায় র‌্যাব সেভেনের একটি টিম। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবের টিমকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে ২ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিদ্বয়কে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। এরা হলো পটিয়ার আমজুর হাট এলাকার মৃত সামশুল আলমের ছেলে হাবিবুর রহমান প্রকাশ মোটা হাবিব (৪২)। তার অপর সহযোগী কুমিল্লার বুড়িচং এলাকার হোসেন মিয়ার ছেলে মোঃ মোশাররফ (২২)। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে অভিযান টিম ৩০ হাজার ৪শ’ ইয়াবা, ৪০ বোতল ফেন্সিডিল, ৬ বোতল বিদেশী মদ, ৫ ক্যান বিদেশী বিয়ার, ৫০০ গ্রাম গাঁজা, ১টি ৭ দশমিক ৬৫ বোরের বিদেশী পিস্তল, ২টি ওয়ান শূটারগান, ১টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৬টি কার্তুজ উদ্ধার করেছে। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে গুলির ৪ রাউন্ড খালি খোসা উদ্ধার করেছে। নিহতদের পকেট থেকে মাদক বিক্রির নগদ ১৭ হাজার ৩শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। নগরীর বিভিন্ন থানার তথ্য অনুযায়ী মোটা হাবিবের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ১২টির অধিক মাদক মামলা রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, হরহামেশাই নগরীর বরিশাল কলোনিতে মাদক বিক্রির হাট বসে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের বিপরীতেই বরিশাল কলোনি। মাঝখানে রেলের একটি সীমানা প্রাচীর। দেওয়ালের মাঝখানে ছোট ২টি ফুটো করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বিঘেœ মাদক ও টাকা লেনদেনের জন্য। একই স্থানে গত বছরের ২০ অক্টোবর প্রায় দেড় কোটি টাকার ১৫ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে। এ সময় ১৮ মামলার আসামি ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন প্রকাশ বাইট্টা ফারুক র‌্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে নিহত হয়। সম্প্রতি র‌্যাবের পরিসংখ্যানে পাওয়া গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ মে পর্যন্ত ৪৩৬টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, ৫৩টি ম্যাগাজিন এবং ৫ হাজার ৭১১ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি ও কার্তুজ উদ্ধার করেছে। ৮৩ লাখ ৪৪ হাজার ২২৫ ইয়াবা, ৪৬ হাজার ৩০৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৩ হাজার ৪৫৫ বোতল বিদেশী মদ ও বিয়ার, ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৯১ লিটার দেশীয় তৈরি চোলাই মদ, ৯৩৩ কেজি ৫৭৫ গ্রাম গাঁজা, ৩৬০ গ্রাম হেরোইন এবং ৭ কেজি ৪২৫ গ্রাম আফিম জব্দ করা হয়েছে।
×