ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে সকালের নাস্তায় মিলবে সবজি রুটি হালুয়া খিচুড়ি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৯ মে ২০১৮

কারাগারে সকালের নাস্তায় মিলবে সবজি রুটি  হালুয়া খিচুড়ি

মশিউর রহমান খান ॥ দেশের ৬৮ কারাগারে আটক বন্দীদের সকালের খাবারের তালিকা পরিবর্তন করছে কারা অধিদফতর। ২শ’ ২৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কয়েদি ও বিচারাধীন আসামিদের সকালের নাস্তা হিসেবে রুটি-গুড়ের পরিবর্তে সবজি রুটি, রুটি হালুয়া বা খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা অধিদফতর সূত্র বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে। খাবারের মেনু পরিবর্তনে বন্দীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ ও বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। এছাড়া বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও সকালের খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে বন্দীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতেও এই খাবার সহায়তা করবে বলে কারাসূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে যে কোন বন্দীকে কারাগারে প্রবেশের পর সকাল বেলার খাবার হিসেবে দুটি শুকনা রুটি ও শুকনা গুড় দেয়া হয়। এছাড়া দুপুরে ও রাতে মাছ ভাত বা মাছ মাংস কিংবা সিডিউল অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হয়। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সকালের নাস্তা পরিবর্তনে মৌখিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আর্থিক বিষয় সংশ্লিষ্ট থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে। কারাসূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের প্রথম থেকেই অর্থাৎ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জুলাই মাস থেকেই এই খাবার পরিবর্তন কার্যক্রম শুরু করবে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাসূত্র জানায়, নি¤œমানের শুকনা ও পরিমাণে অত্যন্ত কম এসব খাবার অনেক বন্দীই খেতে চান না। কোন কোন ক্ষেত্রে রুচিমাফিক না হওয়ায় সকাল বেলায় না খেয়েও থাকতে দেখা যায়। এছাড়া আর্থিকভাবে সচ্ছল বন্দীরা এ রকম শুকনো খাবার খেতে কোনক্রমেই আগ্রহ প্রকাশ করেন না। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের নজরে থাকলেও ব্যয় নির্বাহে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ বিষয়ে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কারা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশের প্রতিটি কারাগারের ভেতরে ও বাইরে প্রিজন্স ক্যান্টিন থাকায় ও প্রিজন্স ক্যাশ (পিসি) পদ্ধতি চালু থাকায় নিজস্ব ব্যয়ে অনেক বন্দীই তাদের সকালের খাবার ক্রয় করে খান। তবে অনেক বন্দীই আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তারা একপ্রকার বাধ্য হয়ে এই রুটি-গুড়ের নাস্তাই গলধঃকরণ করেন। বর্তমানে প্রতিটি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে দৈনিক ১১৬ দশমিক ৬৪ গ্রাম আটা ও ১৪ দশমিক ৫৮ গ্রাম গুড় সকালের নাস্তা হিসেবে প্রদান করা হয়। এই পরিমাণ খাবার বন্দীর সকালের নাস্তার তুলনায় অত্যন্ত কম। অনেক বন্দীকে প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করে খাবারের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য কারারক্ষী ও কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে দেখা যায়। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম না থাকায় এর পরিমাণ বাড়াতে পারেন না। সম্প্রতি কারা মহাপরিদর্শক বহু বছরের দীর্ঘবছরের নিয়ম পরিবর্তন করতে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারাসূত্র জানায়, সপ্তাহে তিনদিন সকালের নাস্তায় খিচুড়ি, বাকি তিনদিন রুটি ও সবজি এবং সপ্তাহে একদিন রুটি আর হালুয়া প্রদান করা হবে। এতে খাবারের মধ্যে স্বাদের পার্থক্য হবে বিধায় বন্দীদের মাঝে খাবার নিয়ে সন্তুষ্টি বাড়বে বলে জানা গেছে। এছাড়া সকালে খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কারাভ্যন্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায়ও তা সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, সকালের নাস্তায় খাবারের পরিমাণ বৃদ্ধি ও আইটেম প্রকার পরিবর্তন করা বন্দীদের দীর্ঘদিনের দাবি। বর্তমানে একজন বন্দীকে সকালের নাস্তায় যে পরিমাণ খাবার প্রদান করা হয় সেই পরিমাণ খাবারে অনেক বন্দী সন্তুষ্ট থাকতে পারছেন না। তাই বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা সকালের নাস্তায় রুটি ও মাত্র ১৪ গ্রাম গুড়ের পরিবর্তে রুটির সঙ্গে সবজি ও হালুয়া বা খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে তা পরিবর্তন করা হবে। সকল কয়েদি ও বিচারাধীন হাজতি আসামিকেই এই খাবার পরিবেশন করা হবে।
×