ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস আজ

হেপাটাইটিসে বিশ্বে বছরে মারা যায় ১৪ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৯ মে ২০১৮

হেপাটাইটিসে বিশ্বে  বছরে মারা যায় ১৪ লাখ মানুষ

নিখিল মানখিন ॥ বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি এবং প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ২০ হাজার রোগী। আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই জানে না তারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস লিভারের প্রদাহজনিত রোগ। মা আক্রান্ত হলে শিশুর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এছাড়া রক্ত পরিসঞ্চালন, যৌনক্রিয়া, সংক্রমিত সুচ বা রেজর ব্যবহারের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ায়। হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়। এটি ‘ডি’-এর সংক্রমণেও ব্যবহার করা যায়। আর ‘ই’ ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি হলেও এখনও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। ‘সি’ ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন এখনও তৈরি করা যায়নি। এমন বাস্তবতা দিয়ে আজ শনিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার, ঢাকার মহাসচিব ডাঃ মামুন আল মাহতাব জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে তাদের এসোসিয়েশন। বাংলাদেশে সাধারণত, ‘এ, বি, সি ও ই ’ ভাইরাস দ্বারা লিভার হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। জন্ডিস দেখা দিলে এ রোগটি ধরা যায়, যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর রক্তে ভাইরাসের নির্দিষ্ট এন্টিজেন বা এন্টিবডি উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। হেপাটাইটিস জন্ডিস হিসেবে বা জন্ডিস ছাড়াও ধরা পড়তে পারে। হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর দেহে ভাইরাসটি বাহক হিসেবে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোন ধরনের উপসর্গ দেখা যায় না বলে এ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা না দিলে রোগীরা সাধারণত চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন না। এ সংক্রান্ত রোগের ব্যাপকতা নির্ভর করে জীবাণুটি কখন শরীরে প্রবেশ করেছিল এবং ব্যক্তিটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু। তাই হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন থাকা দরকার। তিনি জানান, বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ। প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ মানুষ মারা যায়। আর বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি এবং প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ২০ হাজার রোগী। আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই জানে না তারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। সরকারী হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে মৃত্যু হওয়ার মোট সংখ্যার বিবেচনায় লিভারজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা তিন নম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই জানে না তারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। এভাবে নিজের অজান্তেই আক্রান্ত ব্যক্তি ভাইরাসটি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আর শরীরে থাকা ভাইরাসটি যে কোন সময় সক্রিয় হয়ে আক্রান্তকে মেরে ফেলতে পারে বা তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম করে ফেলতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী এ রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত কম। এমনকি স্বাস্থ্যকৌশল প্রণয়নকারী দফতরগুলোও এ ব্যাপারে উদাসীন। লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের জন্য প্রধানত দায়ী হেপাটাইটিস। রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার সামর্থ্য রাখে। পাঁচ ধরনের ভাইরাস হেপাটাইটিস রোগটির জন্য দায়ী। এগুলোকে ইংরেজী এ, বি, সি, ডি এবং ই দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো সাধারণত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে, যৌনবাহিত হয়ে বা আক্রান্তের শরীরের কোন তরলের সংস্পর্শে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচটি ভাইরাসের মধ্যে ‘বি’ ভাইরাসটি সবচেয়ে সাধারণ। ভাইরাসটি আক্রান্ত মায়ের শরীর থেকে নবজাতক বা দুগ্ধপোষ্য শিশুর মধ্যে বাহিত হতে পারে। এছাড়া দূষিত সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। ‘ই’ ভাইরাসটি সাধারণত দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। ডব্লিউএইচও’র মতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে হেপাটাইটিস ছড়িয়ে পড়ার জন্য ‘ই’ ভাইরাস প্রধানত দায়ী। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও এর সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়। এটি ‘ডি’-এর সংক্রমণেও ব্যবহার করা যায়, আর ‘ই’ ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি হলেও এখনও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। ‘সি’ ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন এখনও তৈরি করা যায়নি। এদিকে, বাংলাদেশে এখনও হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল উল্লেখ করে বিশেষ সচেতন থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব দি লিভারের সভাপতি অধ্যাপক সেলিমুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে দেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ পজিটিভ’ ও ‘সি পজিটিভ’ ভাইরাসের জীবাণু বহনকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ সাধারণত রক্ত, সুঁচ ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত। রোগীর শরীরে অন্য কারো প্রবেশ করানোর আগে সেই রক্ত ভালভাবে পরীক্ষা করা উচিত। সূঁচ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আর ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসে প্রতিরোধে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বি পজিটিভ’ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি ২৫ টাকা থেকে ২শ’ টাকা মূল্যের ট্যাবলেট দীর্ঘদিন ধরে খেতে হয়। আর প্রতিটি ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের ইনজেকশন প্রতি সপ্তাহে একটি করে খেতে হয়। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ১ বছর ধরে এ ইনজেকশন দিতে হয়। ‘সি’ ভাইরাসের চিকিৎসায় ট্যাবলেট দিয়ে চলে না। শুধু ইনজেকশন দিয়ে করাতে হয় বলে চিকিৎসা ব্যয়ও বেশি হয়ে থাকে। এসব ভাইরাসজনিত রোগের হাত থেকে রেহাই পেতে স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিমুর রহমান।
×