ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধামইরহাটে বালু উত্তোলন ॥ হুমকির মুখে পরিবেশ, প্রশাসন নিশ্চুপ

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৯ মে ২০১৮

ধামইরহাটে বালু উত্তোলন ॥  হুমকির মুখে পরিবেশ, প্রশাসন নিশ্চুপ

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলায় বন বিভাগের গাছপালা, নদীর তীরের ফসল, রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট বিনষ্ট করে ভূমি দস্যুরা প্রতিদিন শত শত মেসি/ট্রলি/ট্রাক দিয়ে সরাসরি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। জানা গেছে, নদীর পানি কমে যাওয়ায় জেগে ওঠা চরের জমিতে এবার জমির মালিকরা তরমুজ ও ক্ষীরাই চাষাবাদ করেছিল। সেগুলো বিনষ্ট করে ৬ চাকা, ৮ চাকার ট্রাক্টর ট্রলি, মেসি দাপটের সঙ্গে বালু পরিবহনে দৌড়াদৌড়ি করছে। বেপরোয়াভাবে পাকা-কাঁচা রাস্তা, সেতু ও কালভার্টের ওপর দিয়ে বালু ও মাটির মেসিসহ অন্যান্য যানবাহন যত্রতত্র চলাচল করছে। এসব বালুবাহী ট্রাক যানবাহনগুলো কাউকে তোয়াক্কা না করে জনপথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে নদীর পাড়, রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সেতু ও রাস্তাঘাট ধ্বংসের পাশাপাশি বাড়িঘর ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। এসব বালুবাহী যানবাহনগুলো জেলার সাপাহার, বদলগাছী, পতœীতলাসহ জেলা সদর ও জয়পুরহাটে সরবরাহ করছে। ধামইরহাটে ২টি নদী থেকে ১২টি পয়েন্টে ড্রেজার, শ্যালো মেশিন, ট্রাক, ট্রলি দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহোৎসব পড়ে গেছে। বালুর পয়েন্টগুলো হলো, আত্রাই নদীর শিমুলতলী ঘাট, নন্দনপুর, চকহরিহরপুর, ছিলিমপুর, চকনটী, চাঁনপুর, রসুলবিল, ছালিগ্রাম, কেশবপুর, মাহমুদপুর ও কাঁটাবাড়ি। ইশবপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীর ইনশিরা, দিওর, ইশবপুরঘাট, রাঙ্গালঘাট, ত্রিমোহনীঘাট এবং শ্রী নদীর রূপনারায়ণপুর, কোকিল, পাগলদেওয়ান ও আশপাশের ভিটেমাটির বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের মহোৎসব পড়েছে। আত্রাই ও ছোট যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ছোট যমুনার ইনশিরা, দেওর, রাঙ্গালঘাটে বালু উত্তোলনে শতাধিক একর জমি ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সে সঙ্গে আত্রাই নদীর চকহরিহরপুর, রসপুর, তালতলী, চাঁনপুর, কেশবপুর নদীর তীরবর্তী সম্পত্তি আত্রাই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও বিলীন হয়েছে শেখাহাটির কয়েক ব্যক্তির বসতভিটা। এরা হলেন, বিশ্বনাথ দাস, আমজাদ, মোস্তফা, দুখুমিয়া, মফিজ, গাদরু, ভোলানাথসহ আরও অনেকের। ওইসব এলাকার জমির মালিকরা অনেকেই পথে বসেছেন। তারা অনেক বার বাধা দিয়েও প্রভাবশালীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কূলে উঠতে পারেনি। জানা গেছে, সরকারীভাবে কোন অনুমতি নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে টিম মাঝে মধ্যে অভিযানে নামলে তারা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে ট্রলি ট্রাক নিয়ে এ দিক সেদিক পালিয়ে যায়। রাঙ্গালঘাট ও ইসবপুরঘাটে ট্রাক-ট্রলি দিয়ে বালু বিক্রি করছে। এতে রাঙ্গাল ঘাটে নদীর দু’ধার ভাঙতে শুরু করেছে। আত্রাই নদীর শিমুলতলী ব্রিজের নিকট থেকে ড্রেজার/সরাসরি মেসি, ট্রাক দিয়ে বালুদস্যুরা বালু বিক্রি করছে। বালু তুলতে গিয়ে রসপুর, ছালিগ্রাম বনবিভাগের সহস্রাধিক গাছ বিনষ্ট হয়ে নদীতে নেমে গেছে। জমির মালিকদের ফসল বিনষ্ট করেছে। বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয়দের একাধিকবার মারামারি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এতে বালুদস্যুদের নিকট ভূমির মালিকরা কূলে উঠতে পারছেন না। একইভাবে বালু দস্যুরা সুসংগঠিত হয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সিন্ডিকেট সদস্যরা সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালু বিক্রি করছে। দেখা গেছে, আত্রাই নদী, ছোট যমুনা নদী ও পার্শ্ববর্তী আবাদি ভিটামাটি থেকে প্রতিদিন অন্তত শতাধিক ট্রাক-ট্রলি দিয়ে বালু উত্তোলিত হচ্ছে। ওইসব গাড়িগুলোর চাপে অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তাদের বালুর ট্রলিতে ত্রিপল বা ঢাকনা না থাকায় ধূলা-বালি উড়ে পেছনে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের চোখে মুখে কুয়াশার মতো বালু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। বালুদস্যুরা একইভাবে ১০ বছর ধরে বালু বিক্রি করে আসছে।
×