ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পাড়ে বোরোর বাম্পার ফলন

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৯ মে ২০১৮

তিস্তার পাড়ে বোরোর  বাম্পার ফলন

তাহমিন হক ববী, তিস্তা কমান্ড এলাকা থেকে ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হবার পরেও উত্তরবঙ্গের তিস্তা ব্যারাজ সেচপ্রকল্পের কমান্ড এলাকাসহ রংপুর কৃষি অঞ্চলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলাকার প্রতিটি কৃষকের ঘরে-বাইরে এখন শুধু ধান আর ধান। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি এড়িয়েও বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে জানাল কৃষি বিভাগ। এতে শুধু রংপুর কৃষি অঞ্চলের ৫ জেলায় সম্ভাব্য উৎপাদন আশা করা হচ্ছে প্রায় ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন চাল। শুক্রবার সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জমি হতে প্রায় ৮০ ভাগ ধান কৃষক কাটা-মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছে। বাকি ২০ ভাগ ধান আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারবে এমন কথাই জানালেন কৃষককুল। এদিকে দেশের সর্ব বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকার সেচে নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, গঙ্গাচড়া উপজেলার ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করে কৃষক। এতে কৃষকরা বিদ্যুত ও ডিজেল সাশ্রয় করতে পেরেছে ৩৫ কোটি টাকা। তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম এমন হিসাব তুলে ধরে জানালেন বিদ্যুত চালিত সেচযন্ত্রে যদি একজন কৃষক এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করে তাহলে সেচ খরচ হবে দশ হাজার ৫০০ টাকা। আবার ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রে যদি এক হেক্টর জমিতে সেচ দেয় তাহলে কৃষকের খরচ হয় ১৪ হাজার। সেখানে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকার সেচে এক হেক্টরে কৃষকের খরচ পড়ে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকা। অপরদিকে তিনি উৎপাদনের ধানের হিসেবে জানান বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচে কৃষক এক হেক্টরে ধান পাবে ৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। তিস্তার সেচে কৃষক প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন হচ্ছে ৬ মেট্রিক টন। এতে সার্বিক বিবেচনায় আমরা হিসেব করে দেখেছি ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে তিস্তার সেচে ধান উৎপাদন করে কৃষককুল ৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আবার ধান উৎপাদন করেছে প্রায় ১২৮ কোটি টাকা। তিনি বলেন বোরো ধানের সময় তিস্তা নদীতে চাহিদা মোতাবেক যদি উজান হতে পানি পাওয়া যেত তাহলে আমরা প্রথম ফেজের ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান করতে পারতাম। উজানের পানি স্বল্পতায় আমরা ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে সক্ষম হয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া ডিভিশন সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী জানান, শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম পাওয়ার পরেও চলতি রোরো ধান আবাদের সময় তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। এতে সেচ কমান্ড এলাকার কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মণ করে ধান ঘরে তুলছে। কমান্ড এলাকার দক্ষিণ কাঁঠালীর এলাকার কৃষক আলী আকবর জোর গলায় বলবেন তিস্তার সেচে তিনি ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ঘরে ১৮২ মণ ধান ঘরে তুলেছে। তিস্তার প্রধান সেচ খালের বগুলাগাড়ী আর থ্রিটি রেগুলেটরে পরিদর্শন সড়কে দেখা যায় অনেক কৃষক সেখানে ধান মাড়াই করছে। এদের মধ্যে আব্দুল হামিদ সরকার বললেন ঝড়বাদল শিলাবৃষ্টি হলেও আমাদের তিস্তা সেচ প্রকল্পের এলাকার কোন জমির ধান নষ্ট হয়নি। আরও অনেক কৃষক জানায় তারা বিঘাপ্রতি কেউ ২৫ মণ কেউবা ২৮ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছে। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা সেচের পানি দিয়ে গত এক দশক থেকে বা¤পার ফলন ফলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। রংপুর কৃষি অঞ্চল অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে ৫ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ ২ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে উৎপাদন হয়েছে নীলফামারীতে ৮২ হাজার ১১০ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৯ হাজার ৬১২ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১০ হাজার ৫০২ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৫০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলনে চালের উৎপাদন হবে ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন। সম্প্রতি নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৯ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান বিনষ্ট হয়। কৃষকরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাদ্য উৎপাদনে জাতীয়ভাবে এর কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেছে। আমরা জানি বোরো ধান সেচনির্ভর। মৌসুমের শুরুতেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বোরো আবাদে পানি সঙ্কট হয়নি। তাই ফলনও ভাল হয়েছে। মাঠে মাঠে ধান কাটা আর মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠেও তিস্তা সেচ প্রকল্প কমান্ড এলাকা ছাড়াও বিদ্যুত ও ডিজেল চালিত সেচ পাম্পে যে সকল কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছে তারাও এক বাক্যে বলছে এবার বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। দেখা যায় কেউ ধান হাত দিয়ে মাড়ছে কেউ মাড়াই মেশিনে। রাস্তায় রোদে শুকাচ্ছেন ধান কৃষক-কৃষাণীরা। কর্মব্যস্ত কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর একদিকে ছিল কালবৈশাখী ঝড়, শিলা, অতিবৃষ্টি অন্যদিকে বেশ কিছু ধান ক্ষেতে নেকব্লাস্ট আর বিএলবি রোগের আতঙ্ক। তাই চলতি বছর বোরো আবাদ নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চাষীরা। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপদে ধান ঘরে ওঠায় স্বস্তি মিলেছে তাদের।
×