১৯৮১ সালের ১১ মে তারিখে বিশ^খ্যাত ‘নিউজউইক’ পত্রিকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ‘বক্স আইটেম’ হিসেবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয় : ১৯৭৫ সালে সামরিক চক্র কর্তৃক ক্ষমতা দখলকালে নিহত পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারিণী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিহত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত নন; এমনকি যে-সরকারের মোকাবিলা করবেন তার শক্তিকে তিনি বাধা বলে গণ্য করবেন না। তিনি বলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়। মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব কাজ অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য বলে আমি বিবেচনা করি তার মধ্যে থাকবে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।’ নিজের কর্তব্য পালনে তার পিতার অবদান সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন। ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) প্রতি বাংলাদেশের জনগণের প্রীতি ও ভালোবাসা ছিল অপরিমিত’। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে (আওয়ামী লীগের) সভানেত্রী নির্বাচিত করে পরোক্ষভাবে তাঁকেই সম্মান দেখানো হয়েছে। আমি তাঁর অসমাপ্ত কর্মকা- সম্পন্ন করতে পারব।’ [নিউজউইক, ১১ মে ১৯৮১]
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে নিহত হন তখন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ও ছোট কন্যা শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। বিদেশে ছিলেন বলেই তারা রক্ষা পান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সৌজন্যে তারা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কাউন্সিলের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তার সন্তানদের অসুস্থতাবশত তিনি অবিলম্বে সভানেত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার কিছুকাল পর এক সাংবাদিক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি শীঘ্রই দেশে ফিরে বাংলাদেশের নিহত রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তুলবেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমার বাবার হত্যাকারীগণ এবং তাদের সহযোগীদের প্রকাশ্য বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তিদানের দাবি উত্থাপন করাই হবে আমার প্রথম কাজ।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে ফেরা তার পক্ষে নিরাপদ হবে কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘সেই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। আমি হয়তো একটু ঝুঁকি নিচ্ছি। কিন্তু আমার বাবা যে আদর্শের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন তা বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই ঝুঁকি নিতেই হবে।’
বঙ্গবন্ধুর সমালোচকরা দাবি করে তিনি নিজেকে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেনÑ এ সম্বন্ধে মতামত জানতে চাইলে শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘তা হলে আমার বাবাকে হত্যা করার প্রয়োজন ছিল না। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁকে সরিয়ে দেয়া যেত।’
জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক অবস্থান সম্প্রতি দুর্বল হয়েছে কি-না জিজ্ঞেস করা হলে সম্মতিসূচক উত্তর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (জিয়াউর রহমানের) শাসনের বিরুদ্ধে শ্রমিক, কর্মচারী, ছাত্র, কৃষক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং সরকারী অফিসারদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। যে কয়েকজন সামরিক অফিসারকে পদোন্নতি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে সে নিয়োগ করেছে এবং যারা শুরু থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে, কেবল তারাই তাকে (জিয়াউর রহমানকে) সমর্থন করে।’
বাংলাদেশ সরকার তার প্রত্যাবর্তন কি চোখে দেখবে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তা আমি কি করে জানবো? দেশে এখন সামরিক শাসন রয়েছে। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে।’
১৯৭৫-এর আগস্ট মাসের ঘটনাবলীর পেছনে পাশ্চাত্যের কোনো শক্তি, আংশিকভাবে হলেও জড়িত কি-না জিজ্ঞেস করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি কর্তৃক সমগ্র ব্যাপার সম্পর্কে তদন্ত করা উচিত। কে বা কারা এ ব্যাপারে জড়িত ছিল এখন তা বলা কঠিন।’
তার দল সম্পর্কে পাশ্চাত্যের শক্তিবর্গের কি অভিমত তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার বাবার স্বঘোষিত হত্যাকারী কর্নেল রশীদকে ব্রিটেনে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এ ঘটনা থেকে এ ব্যাপারে তাদের মনোভাব অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু আমি তাদের মনোভাব জানি না। গত বছর (১৯৮০) আমি ব্রিটেনে সাত মাস কাটিয়েছি এবং বিভিন্ন জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছি। কয়েকজন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমি আলাপ করেছি। তারা অত্যন্ত সহানুভূতিশীল।’
জিয়াউর রহমানের প্রতি জনসাধারণের বিরূপ মনোভাবের কারণ সম্পর্কে তিনি কি মনে করেন- এই প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বন্দুকের সাহায্যে সে দেশ শাসন করছে। যারাই প্রতিবাদ করার সাহস দেখিয়েছে তাদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের জনগণ তার প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে কি মনে করে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে আমি বহু চিঠি, তারবার্তা এবং ট্র্যাঙ্ককল পাচ্ছি। তারা সবাই চান আমি যেন দেশে ফিরে যাই।’ [দৈনিক মিলাপ, নয়াদিল্লী, মার্চ ১৯৮১]
‘দৈনিক সত্যযুগ’-এর দিল্লীর প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতকারকালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশের কোন কোন মহল কর্তৃক যে অপপ্রচার শুরু হয় তার জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আজ যারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন, ক্ষোভের শিকার হয়ে আজ যারা আমার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছেন, সত্তর-একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা কি ছিল তা স্মরণ করুন। তা হলেই বুঝতে পারবেন, এসব অপপ্রচারকারীরা কারা এবং তাদের ক্ষোভের কারণটাইবা কি।’
॥ দুই ॥
শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে আসার সংবাদ পরদিন (১৮ মে ১৯৮১) ঢাকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। ‘দৈনিক সংবাদ’-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, ‘লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় তাদের নেত্রীকে।’
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকা যে অনন্য রূপ ধারণ করে সে সম্পর্কে এক রিপোর্টে বলা হয়-
রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ মে) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। সেøাগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের স্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে। গতকালের ঢাকা নয় বছর আগের কথাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে এসেছিলেন সেদিন স্বজন হারাবার ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলানগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ’ঘণ্টা। [দৈনিক সংবাদ, ঢাকা, ১৮ মে ১৯৮১]
আর একটি রিপোর্টে বলা হয়-
তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ পরবর্তীকালের বিভিন্ন হত্যাকা-ের বিচার চাই। বিচার চাই বাংলার জনগণের কাছে, আপনাদের কাছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিচার করবে না। ওদের কাছে বিচার চাইব না। আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করুন বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করব।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যে ‘সিস্টেম’ (পদ্ধতি) চালু করতে চেয়েছিলেন তা যদি বাস্তবায়িত হতো তাহলে বাংলার মানুষের দুঃখ আর থাকত না। সত্যিকার অর্থেই বাংলা সোনার বাংলায় পরিণত হতো।
শেরেবাংলানগরে অনুষ্ঠিত লাখো জনতার গণসংবর্ধনাটি ছিল আনন্দঘন ও হৃদয়বিদারক। দলীয় নেত্রীর আগমনে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল আনন্দ, উল্লাস আর উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে আপনজনহারা নেত্রীর দুঃখ আর বেদনার কথা আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের মধ্যে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি করে। বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা বারকয়েক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, আজকের জনসভায় লাখো চেনা মুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরও অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোনদিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।
তিনি বলেছিলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ^াসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেন, ক্ষমতাসীনরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনদের হত্যা করে বলেছিল, জিনিসপত্রের দাম কমানো ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে দেশের অবস্থা কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য আকাশচুম্বী। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দিনে-দুপুরে রাস্তায় মানুষ খুন করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশে^র দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ খেতে পায় না, আর এক শ্রেণীর লোক প্রচুর সম্পদের মালিক হচ্ছে।
তিনি বলেছিলেন, ‘ক্ষমতার গদি পাকাপোক্ত করার জন্য ওরা আগামী দিনে বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করবে। আবার বাংলার মানুষ শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়। আমি আপনাদের পাশে থেকে সংগ্রাম করে মরতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালী জাতি রক্ত দিয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রাম করি।
বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলেছিলেন, ‘আপনাদের ভালবাসা পাথেয় করে আমি আগামী দিনের যাত্রা শুরু করতে চাই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত চার রাষ্ট্রীয় নীতি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করে দেব।’ [দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা, ১৮ মে ১৯৮১]
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিন পর নয়াদিল্লীতে এক সাংবাদিক সাক্ষাতকারে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করেন, দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর রাজনীতিতে ফিরে আসাকে তিনি কিভাবে দেখছেন?
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতি আমার রক্তে মেশানো। ছাত্রীজীবনে আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। পরবর্তীকালে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম এটা ঠিক নয়। জন্মের পর থেকে আমি কর্মচঞ্চল রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ছিলাম। আমার পুরো জীবনটাই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতির জন্যই মা-বাবা, ভাই ও আত্মীয়স্বজন হারিয়েছি। আমি রাজনীতির সঙ্গেই আছি। নতুন করে রাজনীতিতে এসেছি বলতে পারেন না। নতুন করে রাজনীতিতে প্রবেশের প্রশ্ন ওঠে না।’
তার ভারতে অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সত্যিকার অবস্থা কী তা জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছি। বহু লোক (১৯৭৫ সালের) ১৫ আগস্টের পর বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছে। দেশ থেকে বেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আমার ভারতে অবস্থান নিয়ে কোন কথা হওয়ার কারণ নেই।’ [সাপ্তাহিক রাজনীতি, ঢাকা, ১৫ মে ১৯৮১]
চলবে...