ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিস্তিনে গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১৯ মে ২০১৮

ফিলিস্তিনে গণহত্যা

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার মৃত্যুঘণ্টা বেজে উঠল বুঝি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও অগ্নিগর্ভ। সংঘর্ষ, রক্তপাতের মধ্যে অশান্তির ঘনঘটা। জেরুজালেম এক রক্তাক্ত জনপদ এখন। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, ফিলিস্তিনীরা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সোমবার তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর মধ্য দিয়ে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসরাইলীদের নিষ্ঠুর নির্মম ও বর্বর হামলায় শিশুসহ ৫৮ ফিলিস্তিনী নিহত ও আড়াইহাজার আহত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ‘খলনায়ক’ বলা যায়। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দিয়ে তিনি গোড়াতেই শান্তি প্রক্রিয়াতে ঘৃতাহুতি দিলেন। আর সেখানে মার্কিন দূতাবাস খোলার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছেন ফিলিস্তিনীদের। মুসলিম, ইহুদী ও খ্রীস্টান এ তিন সম্প্রদায়ের পবিত্র শহর জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে কার্যত পুরো শহরটির নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে তুলে দিচ্ছে ট্রাম্প। অথচ আল আকসা মসজিদের অবস্থানরত জেরুজালেমের পূর্ব অংশের দাবিদার কেবলমাত্র ফিলিস্তিন। অথচ এই শহরকে পুরোপুরি নিজেদের করায়ত্তে চায় ইহুদীরা। এ নিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে যুগের পর যুগ ধরে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সহিংসতা। ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমে ইহুদী বসতি গড়তে শুরু করে। ১৯৮০ সালে জেরুজালেমকে রাজধানী ঘোষণা করে ইসরাইল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখন তাদের সমর্থন দেয়নি। পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনে প্রথম গণঅভ্যুত্থান বা ইন্তিফাদার সূচনা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ১৯৯৩ সালে দুদেশের মধ্যে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে। ওই শান্তি চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিনও চায় পূর্ণ জেরুজালেম তাদের রাজধানী হবে। কিন্তু সঙ্কটের সমাধান হয়নি। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজেদের দূতাবাস জেরুজালেমে রাখেনি। ইসরাইলে যেসব দূতাবাস আছে, তা সবই তেলআবিবে। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের প্রবল বিরোধিতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতামতকে উপেক্ষা করে ট্রাম্প তার দেশের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করে। যা ফিলিস্তিনী জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা গাজায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ দমনের জন্য ইসরাইলী বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। মার্চের শেষ সপ্তাহে ফিলিস্তিনীরা গাজায় বিক্ষোভ শুরু করলেও দূতাবাস খোলার দিন নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। যা গণহত্যার নামান্তর। নিহতদের মধ্যে ছয়টি শিশু এবং একজন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা ব্যক্তিও রয়েছেন। আর ইসরাইলীরা আনন্দ শোভাযাত্রা করে জেরুজালেম দিবস পালন করে। এই দিনটি ছিল ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সত্তরতম বার্ষিকী। ঘটনায় মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ট্রাম্পের উস্কানিমূলক কার্যক্রমের মাসুল দিতে হবে এখন মধ্যপ্রাচ্যকে। ট্রাম্পের পূর্বসূরিরা দূতাবাস স্থানান্তরের কাজ থেকে দশকের পর দশক ধরে বিরত ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প এই পদক্ষেপ নিয়ে স্পষ্টতই দখলদার ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করলেন। বিবদমান দুপক্ষের একটি পক্ষের দাবিকে স্বীকৃতি দেয়া হলে আর নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যায় না। এ অবস্থায় ইসরাইল-ফিরিস্তিন সঙ্কট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোন ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। গত বছর ছয় ডিসেম্বর ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে তার এ ভূমিকার সমালোচনা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১২৮টি দেশ ট্রাম্পের এই ঘোষণার বিপক্ষে ভোট দেয়। জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর হলে সঙ্কট যে আরও বাড়বে, সে বিষয়ে বিশ্ব নেতারা ট্রাম্পকে সতর্ক করেন। ট্রাম্প সেসবে গুরুত্ব দেয়নি। বরং হটকারী পদক্ষেপ নিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাও লঙ্ঘন করেছেন ট্রাম্প। তার পদক্ষেপে একদিকে ফিলিস্তিন সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করল, অন্যদিকে তা জাতিসংঘকে এক অকার্যকর সংস্থায় পরিণত করেছে। ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা সংঘটিত হলো তার দায়ভার ট্রাম্পকেই নিতে হবে। যদিও তিনি বলেছেন, এই হত্যাকা-ের তদন্ত করতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনেও বাধা দিয়েছে। এই হত্যাকান্ড মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লঙ্ঘন এবং যুদ্ধাপরাধ অবশ্যই। এসব ঘটনার বিচার হবেই, কেউই পার পাবে না!
×