ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নবজাতক

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৯ মে ২০১৮

রোহিঙ্গা নবজাতক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে ৬০ শিশু- এমন সংবাদ দিয়েছে ইউনিসেফ। এর আগে বিবিসি একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল চলতি বছর বাংলাদেশে ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং তাদের বাংলাদেশে শরণ নেয়ার পর সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাইরের পৃথিবী সম্পূর্ণ অবগত। দু’একটি দেশ ছাড়া সকলেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাসের সকল সুবিধা ও অধিকার প্রদানের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে বলেছে। জাতিসংঘ কফি আনান কমিশনের মাধ্যমে সরেজমিনে পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কয়েকটি বাস্তব ও ন্যায়সঙ্গত প্রস্তাব রেখেছে। বাস্তবতা হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য চলতি বছর অন্তত ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রয়োজন জানিয়ে গত মার্চে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এর মধ্যে ২০ শতাংশও এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এমনিতেই আমরা নানাভাবে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করছি প্রতিনিয়ত। বন কেটে পাহাড় কেটে, কাঠ আর মাটি বিক্রি করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছি মারাত্মকভাবে। এই কাটাকাটির সঙ্গে এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রাণভয়ে ছুটে আশা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। যারা প্রতিনিয়ত নতুনভাবে বন-পাহাড় কেটে আশ্রয় নিচ্ছে টেকনাফ-কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চলে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোপরি চেষ্টা করে যাচ্ছে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিত করার। কিন্তু তারপরও এই প্রচেষ্টার বাইরে এখনও রয়ে গেছে অনেকে এবং সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত আগত রোহিঙ্গার দল নানাভাবে সম্মিলিত বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন প্রান্তরে। যা বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির ভারসাম্যকে দ্রুত ঠেলে দিচ্ছে নেতিবাচক পরিস্থিতির দিকে। এ যেন আমাদের পরিবেশের জন্য মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ। আন্তর্জাতিকভাবে এখন এটা তুলে ধরা জরুরী যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাবিরোধী নীতির কারণেই দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাটি চলছে। এই সমস্যার কোন দায় বাংলাদেশের না থাকলেও জনবহুল এই দেশটিকে ১০ লাখ শরণার্থীর ভার বইতে হচ্ছে এবং এর একটি স্থায়ী সমাধান জরুরী হয়ে পড়েছে। অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ একজন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বাবা-মা রোহিঙ্গা হওয়ায় এদেশে জন্ম নেয়া তাদের শিশুরাও স্বাভাবিকভাবেই রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের নাগরিক বলে বিবেচিত হবে। তারা এদেশে জন্ম নেয়ার সুবাধে জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হবে না। এই শিশুরা রোহিঙ্গা হিসেবেই তালিকাভুক্ত হবে।’ রোহিঙ্গা শিশুদের নাগরিকত্ব প্রশ্নে সরকারী নীতি অচিরেই জানা যাবে, আশা করা যায়। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে রোহিঙ্গা শরণার্থী। এখন নতুন করে হাজার হাজার নবজাতক সেই চাপের ওপর হবে বাড়তি বোঝা। বাংলাদেশ মানবতাবাদী দেশ হিসেবে ইতোমধ্যেই বহির্বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শিশু এবং একইসঙ্গে তাদের মায়েদের সুস্থতা নিশ্চিত করা বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব। তা যত বড় চ্যালেঞ্জই হোক, বাংলাদেশ সেটি উত্তমরূপে মোকাবেলা করবে বলে আশা করা যায়। নতুন শিশু হচ্ছে মানবসমাজের প্রতিনিধি, সে যে কোন জাতিরই হোক না কেন। সারা বিশ্ব যখন অনেকটা মুখই ফিরিয়ে নিয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে, সে সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্রয় ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের মহান কাজটি করেছেন। মাদার অব হিউম্যানিটি তাঁর উদারতা দেখিয়েছেন। এবার বিশ্বনেতারাও কিছুটা হলেও উদারতা দেখাবেন, সেটাই প্রত্যাশিত। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টিতে সম্মত হবেন যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি আশু বেগবান হয়।
×