ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অনেকেই মনে করেন সেই থেকেই এর নামকরণ করা হয় সাতছড়ি। তবে এর আগের নাম ছিল ‘রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট’। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এ উদ্যান। ঢাকা শহর থেকে ১৩০ কিমি দূরত্ব। উদ্যানের কাছাকাছি রয়েছে ৯টি চা বাগান। উদ্যানের পশ্চিম দি

পাহাড়-টিলা-হাওড়-বন হবিগঞ্জের পর্যটন

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৮ মে ২০১৮

 পাহাড়-টিলা-হাওড়-বন হবিগঞ্জের পর্যটন

রিফাত কান্তি সেন ॥ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ আমাদের বাংলাদেশ। দেশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত সবখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির নানা নিদর্শন। ভ্রমণ করতে ভালবাসেন না এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! ব্যস্ততাকে কিছুটা সময়ের জন্য ছুটি দিতে বিকল্প নেই ভ্রমণের। তবে ইদানীংকালে মানুষ বেশিই প্রকৃতির কাছে ছুটে যেতে চায়। প্রকৃতির টানে যেন বাঁধা পড়েছে কিছু মানুষের জীবন। নগর জীবনের ব্যস্ততাকে ছুটি দিতে মানুষ ছুটে চলছে প্রকৃতির কাছে। প্রিয় পাঠক আজ আমরা আপনাদের হবিগঞ্জ জেলার গল্প শোনাব। পাহাড়, টিলা, হাওড়, বন নিয়েই হবিগঞ্জের পর্যটন। রয়েছে চির সবুজ চায়ের বাগান আর দিগন্তজোড়া হাওড়ের অকৃত্রিম সৌন্দর্য। হবিগঞ্জ নামকরণে রয়েছে নানা মতভেদ। তবে বেশিরভাগ মানুষের মতামত অনুযায়ী ঐতিহাসিক সুলতানশি হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হৈদায়েত উল্লাহর পুত্র সৈয়দ হবিব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ বা বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামানুসারে পরবর্তীতে হবিবগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ নামে রূপলাভ করে বর্তমান হবিগঞ্জ জেলাটি। হবিগঞ্জ জেলায় শিক্ষার হারও তুলনামূলক ভাল। চিত্তাকর্ষক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম কমলারানীর সাগর দীঘি, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, বানিয়াচং রাজবাড়ী, শ্রীবাড়ি চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড, মহারতœ জমিদার বাড়ি, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জনপ্রিয় স্থান। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের এ দেশ। সকলেরই জানা আছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। দেশের ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম এটি। এর আয়তন ২৪২.৮২ হেক্টর বা ছয়শ’ একর। উদ্যানটি একটি ট্রফিকেল রেইন ফরেস্ট বা মিশ্র চির সবুজ এবং পাতাঝড়া বন। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া বা ঝর্ণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন সেই থেকেই এর নামকরণ করা হয় সাতছড়ি। তবে এর আগের নাম ছিল ‘রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট’। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত এ উদ্যান। ঢাকা শহর থেকে ১৩০ কিঃমিঃ দূরত্ব। উদ্যানের কাছাকাছি রয়েছে ৯টি চা বাগান। উদ্যানের পশ্চিম দিকে রয়েছে সাতছড়ি চা বাগান। সাতছড়ি উদ্যানে রয়েছে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, বেত গাছসহ একাধিক বৃক্ষারাজি। শুধু বৃক্ষই নয়, উদ্যানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু। যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরিসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী। রয়েছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি। প্রিয় পাঠক সাতছড়ি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। পাখিদের একটি অভয়াশ্রম ও বটে। নিজ চোখে না দেখলে কখনোই এর সৌন্দর্য আপনি অবলোপন করতে পারবেন না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান দেখার জন্য ভ্রমণ প্রিয়সী মানুষরা ছুটে আসেন স্থানটিতে। তাই আপনাদের হাতে কিছু সময় থাকলেই ঘুরে আসতে পারেন দৃষ্টিনন্দন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। বিথাঙ্গল বড় আখড়া বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অন্যতম তীর্থস্থান বিথাঙ্গল বড় আখড়া। এই তীর্থ স্থানটি বিতঙ্গল আখড়া নামেও পরিচিত। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলাতে অবস্থিত। ধারণা করা হয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত একটি আখড়া এটি। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন রামকৃষ্ণ গোস্বামী। বিথাঙ্গল বড় আখড়াটি এখন দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত থাকে সব সময়। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলিতে নির্মিত পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান একটি। বিশেষ করে বৈষ্ণব ধর্মের লোকদের পদচারণা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এ আখড়ায় বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। আখড়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ২৫ মণ ওজনের শে^ত পাথরের চৌকি, পিতলের তৈরি সিঙ্ঘাসন, সুসজ্জিত রথ, রৌপ্য পাত্র ও সোনার মুকুট উল্লেখযোগ্য। কমলারানীর দীঘি আয়তনের দি থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাধারা হিসেবে স্বীকৃত কমলারাণীর দীঘি। এটি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। দীঘিটি খনন করান স্থানীয় সামন্ত রাজা পদ্মনাভ। দৃষ্টিনন্দন এ দীঘিটি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে খুবই সুপরিচিত। দেশ-বিদেশে এটি রাণী কমলাবতীর দীঘি বা কমলারাণী দীঘি নামেও বহুল প্রচারিত। দীঘিটি দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে স্থানটিতে। কালে কালে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিই স্থানটি ভ্রমণ করে গেেেছন। পল্লী কবি জসীমউদ্দীন বানিয়াচং পরদির্শনকালে এ দীঘিটির সংস্পর্শে আসেন। তিনি এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ‘রাণী কমলাবতীর দীঘি’ নামে একটা কবিতা লিখেন, যে কবিতাটি পরবর্তীতে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ সূচয়ণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রিয় পাঠক এই হবিগঞ্জ জেলায়ই রয়েছে দেশের বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র ‘বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র’। তাই আর দেরি না করে ঘুরে আসুন হবিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে।
×