ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রবাদে সমাজ জীবন

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১৮ মে ২০১৮

বাংলাদেশের প্রবাদে সমাজ জীবন

ড. আশরাফ পিন্টু কলেজের স্বনামধন্য অধ্যাপক। এ প্রজন্মের তরুণ চিন্তাশীল উদ্যমী গবেষক লেখকদের মধ্যে যার অবস্থান শীর্ষে। কবিতা, ছড়া, ছোট গল্প, অনুগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণমূলক লেখাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার অসীম আগ্রহ। আশরাফ পিন্টু সাহিত্যের বিভিন্ন অলিগলিতে বিচরণ করলেও গবেষক হিসেবে চিন্তাশীল মানুষদের মননশীলতায় দোলা দিয়েছেন বেশি। গবেষণায় রয়েছে তার ঈর্ষণীয় পারদর্শিতা। এই পারদর্শিতার উজ্জ্বল প্রমাণ পাঠকরা খুঁজে পাবেন ২০১৮ সালে ভাষার মাসে প্রকাশিত তার ‘বাংলাদেশের প্রবাদে সমাজ জীবন’ নামক বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায়। এই বইটি মূলত লেখকের পি এইচ ডি অভিসর্ন্দভ। লেখকের ভাষায় এ অভিসন্দর্ভটি রচনার জন্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ২০১৩ সালে ডক্টর অব ফিলসফি ডিগ্রী প্রদান করে। এটা তার দীর্ঘ দিনের ঘামঝরা সোনালী ফসল। এই গবেষণা গ্রন্থটি লেখক ছয়টি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন। প্রথম অধ্যায়ে লেখক অবতরণিকা দিয়ে শুরু করেছেন। তারপর লেখক এই বইটির গবেষণার উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করেছেন। এরপর গবেষণা পদ্ধতি আলোচনা করেছেন। গবেষণা কর্মটি সম্পন্ন করতে তিনি দুই ধরনের তথ্য উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পূর্বপাঠের পর্যালোচনা করতে গিয়ে তিনি অনেক তথ্যের যোগান দিয়েছেন। এ মহৎ গবেষণা করতে গিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। এরপর গবেষণা কর্মটি আলোচনার সুবিধার্থে বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভাজন করেছেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রবাদের সংজ্ঞা নিরুপণ করা হয়েছে। সংজ্ঞা নিরুপণ করতে গিয়ে প্রবাদ নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের মধ্য থেকে বেকন, এরিস্টটল, আর্চার টেলর, মার্কিন লোকবিজ্ঞানী এ্যালান ডার্ন্ডেস, ডব্লিউ সি হাজলিট, ৬ আশুতোষ ভটাচার্য এবং ডক্টর কাজী দীন মুহাম্মদ এর মতো বরেণ্য মনীষী ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর প্রবাদের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ এবং প্রতিটি বিভাগকে আবার উপবিভাগে শ্রেণীকরণ করেছেন। বাংলা ভাষায় প্রবাদের মতো সমধর্মী অনেক বাক্য ও বাক্যাংশ প্রচলিত আছে। যেমন : বচন, প্রবচন, খনাও ডাকের বচন, নীতিবাক্য, লোকছড়া, ধাঁধা, বাগধারা, ও প্রবাদধর্মী বাক্যাংশ সমপর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাংলা প্রবাদে মেটাফোকলোর ও প্রবাদের মটিফ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর প্রবাদের গঠন প্রকৃতি ও শিল্প প্রকরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তৃতীয় অধ্যায়ে সমাজ ও সমাজ কাঠামো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশের সমাজ ও সামাজিক স্তর বিন্যাস নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছেন। সাহিত্য চর্চায় গবেষণার কাজটি সবচাইতে জটিল। গবেষককে এখানে অন্ধকারে মুক্তা খুঁজতে হয়। এর জন্য গবেষককে অগাধ পরিশ্রম করতে হয়। এ অধ্যায়ে লেখক প্রবাদের উদ্ভব ও সামাজিক বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অগাধ পরিশ্রমী এক চৌকস গবেষকের পরিচয় দিয়েছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত প্রবাদের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রবাদগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায় এর বিচিত্র রুপায়ন পেয়েছে মানব সমাজ ও চরিত্রের বিভিন্ন দিক। সেগুলো অতি সুন্দরভাবে উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে। পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলা প্রবাদের তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে বাংলা প্রবাদের পাঠান্তর ও বিভিন্ন জেলার প্রবাদের সঙ্গে তুলনা, উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার প্রবাদের সঙ্গে তুলনা, আদিবাসী ভাষার প্রবাদের সঙ্গে তুলনা, সংস্কৃত শ্লোকের সঙ্গে বাংলা প্রবাদের তুলনা, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রবাদের সঙ্গে বাংলা প্রবাদের তুলনা অত্যন্ত চমৎকার ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে সুন্দর একটা উপসংহারের মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে। তবে এই উপসংহারের মধ্যে পুরো বইয়ের আলোচনা অতি সংক্ষিপ্ততাকারে চলে এসেছে। মনে হবে উপসংহারটাই যেন পুরো বইয়ের জ্বলজ্বলে এক প্রতিচ্ছবি। বইয়ের শেষে লেখক একটা পরিশিষ্ট দিয়েছেন। যার মধ্যে বিভিন্ন ধারার, বিভিন্ন রকমের, চিত্তাকর্ষক ৫২০টি প্রবাদ নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। যা পড়লে যে কারোর মনই আনন্দে পুলকিত হতে বাধ্য। সাকী মাহবুব
×