ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তালিকাভুক্তির চার বছরেই তিন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১৮ মে ২০১৮

তালিকাভুক্তির চার বছরেই তিন কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়াবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার চার বছরের মধ্যে ৩ কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলো আর্থিক হিসাব প্রকাশও বন্ধ রয়েছে। আর্থিক হিসাব প্রকাশ না করার কারণে কোম্পানিগুলো থেকে লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা। অথচ ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। কোম্পানি তিনটি হলোÑ এমারেল্ড অয়েল, সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও তুং হাই নিটিং এ্যান্ড ডাইং। কোম্পানিগুলোকে বাজার থেকে মূলধন উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য। কিন্তু টাকা নেয়ার পর ঘটেছে উল্টো। জানা গেছে, সর্বশেষ তালিকাভুক্ত এই তিন কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কারণ কোম্পানিগুলোর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করার কারণে শেয়ার কেনাবেচাতেও বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। এমারেল্ড অয়েল ॥ গত ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। জুন ক্লোজিং এ কোম্পানিটি এরই মধ্যে সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে গেছে। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৯ মাসের বা তৃতীয় প্রান্তিকের পরে আর্থিক হিসাব এখনও প্রকাশিত হয়নি। যদিও এরই মধ্যে আরও ৪টি প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশের সময় পার হয়ে গেছে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস এবং ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। এরপরে আর কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়নি। কোম্পানিটির ঢাকা অফিসও প্রায় গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর দাঁড়িয়েছে ১৩.১০ টাকা। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৫৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৮.৪২ শতাংশ শেয়ার পরিচালনা পর্ষদ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ৮.৬৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৬২.৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির সময় স্পন্দন নামের রাইস ব্রান তেল বাজারজাত করত। সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইল ॥ বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটিরও অবস্থাও একই রকমের। পারিবারিক কলহের কারণে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আর সময় অতিবাহিত হলেও ৪টি প্রান্তিকের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেনি। এ কোম্পানিটি ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। গত ২০১৪ সালে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ১১ শতাংশ বোনাস, ২০১৫ সালে ১২ শতাংশ বোনাস ও ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির এ্যাকর্ডের কমপ্লায়েন্স পালনের নামে উৎপাদন বন্ধ করা হয়। তুং হাই নিটিং এ্যান্ড ডাইং ॥ তুং হাই নিটিংয়ের আর্থিক হিসাব প্রকাশ বন্ধ রয়েছে। ২০১৭ সালের মার্চের পরে কোন আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়নি। পরিচালকদের অন্তঃকোন্দলে বন্ধ রয়েছে উৎপাদন। অবস্থান করছে সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১০৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০.০৪ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক, ৫.৬২ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৬৪.৩৪ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। ২০১৪ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ বোনাস ও ২০১৬ সালে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। সিএ্যান্ডএ টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) জামাল পাটোয়ারি বলেন, কেন যে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করছে না, তা আমি নিজেও জানি না। এ বিষয়ে উর্ধতন ম্যানেকজম্যান্টই ভাল বলতে পারবেন।
×