ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কৌশলী ইইউ

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৮ মে ২০১৮

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কৌশলী ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের সঙ্গে তেল কিনতে ডলারের পরিবর্তে ইউরোতে মূল্য পরিশোধ করবে। ডলারের মাধ্যমে লেনদেন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইইউ। ইউরোপের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে রুশ বার্তা সংস্থা স্পুটনিক খবরটি দিয়েছে। স্পুটনিক নিউজ। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকো মোগেরিনি মঙ্গলবার ব্রাসেলসে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাওয়ার পর নিজেদের করণীয় ঠিক করতে তারা মতৈক্যে পৌঁছেছেন। তেল ও গ্যাস খাতে ইরানের সঙ্গে ইইউ লেনদেন এখন থেকে ডলারের পরিবর্তে ইউরোতে করতে তার সম্মত হয়েছে। ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে স্থির থাকার কথা বলছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইরানের সঙ্গে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র জয়েন্ট কম্প্রিহেনশন প্ল্যান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামের চুক্তিটি হয়। ২০১৫ সালে চুক্তিটি হওয়ার পর ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ক্রমান্বয়ে শিথিল করা হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারি মাসেই হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন যে, তিনি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পরবর্তী আদেশে সই করবেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই চুক্তির বিরোধিতা করে এসেছেন। তার মতে, এক দশকের জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। তেহরান যেন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হয়ে উঠতে না পারে তার কোন নিশ্চয়তা এ চুক্তিতে নেই। শেষ পর্যন্ত ৮ মে তিনি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। মার্কিন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া কিছু কিছু ইউরোপীয় কোম্পানি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা গুটিয়ে আনার কথা জানিয়েছে। জার্মানির বীমা কোম্পানি এ্যালিয়ানজ এবং ট্যাঙ্কার অপারেটর ম্যারসক ইরানে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় পারস তেল ক্ষেত্রের ১১টি স্তরে কাজের জন্য গত বছর মোট ১ বিলিয়ন ইউরো (৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ড) বিনিয়োগের চুক্তি হয়েছিল। বৃহৎ ফরাসী তেল কোম্পানি টোটালও ইরানের সঙ্গে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার কথা বলেছে। ট্রাম্প শুধু চুক্তি থেকেই তার দেশকে সরিয়ে নেনটি বরং যেসব দেশ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করবে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি ইরানকে কিছুটা হলেও বিস্মিত করেছে। কারণ তেহরান মনে করেছিল ব্যবসার অভিজ্ঞতা থাকায় ট্রাম্পের হয়ত বাণিজ্য বিরোধী কোন পদক্ষেপ নিবেন না। ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য এই চুক্তি জরুরী। এমন কোন কারণ ঘটেনি যে কারণে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে ইরান জরুরী ভিত্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচী আবার শুরু করতে পারে। চুক্তির সমর্থকরা বলছেন, চুক্তিটি করার মাধ্যমে তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সম্ভবনা পিছিয়ে গেছে। সমালোচকদের মতে ইরান যদিও সেন্ট্রিফিউজ তৈরি বন্ধ ও ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে, তারপরও চুক্তিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি। চুক্তি বহাল থাকা অবস্থাতেই তেহরানে সমৃদ্ধ করা ইউরেনিয়াম দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তিটির বিরোধী। তাই ট্রাম্পের পক্ষে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়া কঠিন কিছু নয়। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে যারা ইরানে ক্ষমতায় আছেন সরকার টিকিয়ে রাখা তাদের প্রধান অগ্রাধিকার বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। অন্যদিকে ইরানে শাসক পরিবর্তন ঘটানো ছিল ওয়াশিংটনের অন্যতম নীতি। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সম্পর্কে অবনতি ঘটে ওই বছর নবেম্বরে জিম্মি সঙ্কটের পর।
×