ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নানান আয়োজনে বিএফএর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৮ মে ২০১৮

নানান আয়োজনে বিএফএর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলচ্চিত্র সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যম হিসেবে ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ।’ পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে এনাম কমিটির সুপারিশে ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ’ (বিএফএ) নামে কার্যক্রম শুরু হয়। এই ৪০ বছরের পথ পরিক্রমায় আর্কাইভটি এখন নিজস্ব ঠিকানা রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চলচ্চিত্র, পোস্টার ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনী এবং সেমিনারের মধ্যদিয়ে নিজস্ব ভবনে দিনব্যাপী বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন হয় বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। পরে মন্ত্রী ফিতা কেটে পোস্টার ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর সূচনা করেন। ১৯৫৬ সাল থেকে সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার ও স্থিরচিত্র প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এর আগে দেখানো হয় ১৯৩৫ নির্মিত সালে প্রমথেস বড়ুয়ার কালজয়ী সিনেমা ‘দেবদাস’। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে আর্কাইভ ভবন মিলনায়তনে শুরু হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বহু চড়াই উতরাইয়ের পর বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ তার নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করল। আমি মনে করি অত্যাধুনিক এই ভবনটি আমাদের চলচ্চিত্র ইতিহাসের কথা বলবে। এখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে আগেকার সেলুলয়েডের চলচ্চিত্রগুলো যুগ যুগ ধরে রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। একটি চলচ্চিত্র মানুষের জীবনকে পাল্টে দিতে পারে। বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি, চলচ্চিত্রের মতো শক্তিশালী মাধ্যম কিভাবে উন্নয়ন হবে তাও দেখেছিলেন। জাতীর স্বাধীনতা সংগ্রামে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অনেক। আমি মনেকরি আর্কাইভ অতীতকে ধরে রেখে, বর্তমানকে চালু রেখে ভবিষ্যতের পথ দেখায়। ইতিহাসের বদল হয়, কিন্তু আর্কাইভের বদল হয় না। এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের স্বপ্নের পূর্ণ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। চলচ্চিত্র আর্কাইভের জন্য নির্মিত এই অত্যাধুনিক ভবনটি সেই কথাই বলে। চলচ্চিত্র সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ খুবই প্রয়োজন ছিল। বহু দেরিতে হলেও তার বাস্তবায়ন হয়েছে। এর দ্বারা ভবিষ্যতে যারা চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করবেন তারা উপকৃত হবেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যসচিব আবদুল মালেক বলেন, চলচ্চিত্র আর্কাইভ জগতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আজ এই নতুন ভবন তার উদাহরণ। অনেক চলচ্চিত্র এখানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার চলচ্চিত্র এখানে সংগৃহীত আছে। এটা পর্যাপ্ত নয়, আরও সংগ্রহ প্রয়োজন। আমি এর মহাপরিচালককে বলব বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র যেন এখানে সংগৃহীত থাকে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক শচীন্দ্র নাথ হালদার। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে ছিল মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। এরপর শুরু হয় সেমিনার। ‘বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ : ৪০ বছরের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চলচ্চিত্র গবেষক ও সমালোচক অনুপম হায়াৎ। আলোচনায় অংশ নেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, মোরশেদুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুপম হায়াৎ তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তিভূমি স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি করে। এর ছাপ পড়ে চলচ্চিত্রেও। ঢাকায় শুরু হয় শুদ্ধ চলচ্চিত্র চর্চা। বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ এবং ১৯৮০ সালে ফিয়াকের সদস্য হয়। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ফরম্যাটের দেশে-বিদেশের কয়েক হাজার নান্দনিক, স্মরণীয়, ঐতিহাসিক, জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্ট, নেগেটিভ, ভিডিও এবং ডিভিডি। এসবের মধ্যে রয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, প্রামাণ্য ও সংবাদচিত্র। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ঢাকায় নির্মিত প্রথম সবাক বাংলা কাহিনীচিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ চলচ্চিত্রের স্থিরচিত্র, ফটোসেট, পোস্টার ও চিত্রনাট্যের একটি বিশাল ভা-ার গড়ে উঠেছে গত ৪০ বছরের সংগ্রহ ও প্রচেষ্টায়। গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকা ও গানের বই, চিত্রকাহিনীর ও এর বিশাল লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। দেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে স্বল্পদৈর্ঘ্য ও বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র আন্দোলনের সূচনা হয় ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ পরিচালিত নয়টি ফিল্ম এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ও একটি এনিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণ কোর্স থেকে। ২০০৪ সালে ফিল্ম আর্কাইভ থেকে প্রকাশিত হয় ২৫ বছর উপলক্ষে রজতজয়ন্তী স্মারক গ্রন্থ। এই ৪০ বছরে অনেক চলচ্চিত্র উৎসব, প্রদর্শনী, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। তবে কিছু না পাওয়ার বেদনাও রয়েছে। সেমিনার শেষে প্রজেকশন হলে পর্দায় জহির রায়হানের অসমাপ্ত চলচ্চিত্র লেট দেয়ার বি লাইটর ফুটেজ প্রদর্শন হয়। সবশেষে ছিল রবার্ট ইনরিকো পরিচালিত ফরাসী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ইনসিডেন্ট এ্যাট আউল ক্রেক’ প্রদর্শন।
×