ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৮ মে ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বটে। হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না। এখনও কত মানুষ ঘরহীন! অনাহারে অর্ধাহারে কাটে তাদের। কিন্তু এই জীবন মানোন্নয়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। ভাগ্যবঞ্চিত মানুষের কষ্টটা কেউ অনুভব করতে চান না। সময়ই হয় না তাদের। সুখী মানুষরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাদের ‘আরও চাই’, ‘আরও খাব’ স্বভাব। সব একলা গিলে ফেলতে চান। এ অবস্থায় রোজার একটা আলাদা তাৎপর্য আছে বৈকি। আজ শুক্রবার থেকে শুরু হলো সেই রোজা রাখার। মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা ভোরে সেহ্রি খেয়ে প্রথম রোজাটি রেখেছেন। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকবেন তারা। সন্ধ্যায় ইফতার। এভাবে লম্বা সময় না খেয়ে থাকা নয় শুধু, ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট বোঝার সুযোগ করে দেয় রোজা। তাদের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ দেয়। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে সংযমের শিক্ষা নেয় মুমিন মুসলমানরা। কথায় সংযম। আচরণে সংযম। অন্যায় থেকে, মিথ্যা থেকে, প্রতারণা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। রমজান আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে আসে। ক্ষুধা বাড়ছে। সামনে খাবার। কিন্তু একজন মানুষ লুকিয়েও সে খাবার গ্রহণ করছেন না। এভাবে নিজের মধ্যে ওপর নিজের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিবারের মতো এবারও অভিন্ন শিক্ষা দিতে এসেছে রমজান। বেশকিছু দিন ধরেই চলছিল মানসিক প্রস্তুতি। সারাদেশের মতো ঢাকায়ও চলছিল দিন গণনা। বুধবার সন্ধ্যায় আকাশের দিকে চোখ মেলেছিলেন অনেকেই। না, চাঁদ দেখা যায়নি শেষতক। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, বৃহস্পতিবার রাতে সেহ্রির মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের রোজা। সে অনুযায়ী যে যার মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মূল প্রস্তুতিটা, আগেই বলেছি, মানসিক। তবে সমস্যা একটিই, রমজানের মূল শিক্ষা অনেকেই গ্রহণ করেন না। এরই মাঝে শহর ঢাকায় এক ধরনের হুলস্থ’ূল অবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে বাজার করেও শেষ করতে পারছেন না অনেকে। আরও কিনছেন। যেন খাদ্য উৎসবের প্রস্তুতি! বাজারে অন্য রকম হৈ হুল্লোড়। উৎসবের আমেজ। সংযমের অভাব স্পষ্ট। এভাবে রোজার মূল ভাবটি থেকে অনেকেই দূরে সরে যাচ্ছেন বলে মনে হয়। অন্যদিকে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সব সময়ই রোজা। না খেয়ে বা কম খেয়ে থাকা জীবন। কোন রকমে বেঁচে থাকা। বৃহস্পতিবার তেমন একজন রিক্সা শ্রমিকের দেখা মিলল। রাজধানীর মনিপুর এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। না, তার রিক্সাটিতে কোন যাত্রী ছিলেন না। তার পরিবর্তে বিরাট বোঝা। অনেকগুলো ভারি বস্তা রিক্সায় বহন করছিলেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, আজ রোজার দিনেও কাজে বের হতে হবে তাকে। তার ছুটি নেই। তার প্রতিদিনই রোজা! আল্লাহকে খুশি করার জন্য যে রোজা, সে রোজা হয়ত তিনি পালন করেন। হয়ত স্বপ্ন দেখেন সবার মতো এক মাস রোজা পালন করবেন তিনি। তার এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে কি? রোজার উপলক্ষে বদলে গেছে সরকারী অফিস আদালতের সময়। এখন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অফিস আওয়ার। এ সময়ের মধ্যে অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরবেন কর্মজীবী মানুষরা। সঙ্গত কারণেই ব্যস্ততা বেড়ে যাবে। যানজট বাড়বে শহরের। আরও দুর্ভোগের আশঙ্কা আছে। ঢাকাবাসী সব কিছুর জন্যই যেন অপেক্ষা করে আছেন! শেষ করা যাক, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রসঙ্গ টেনে। প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপগ্রহের মালিক হলো বাংলাদেশ। হ্যাঁ, বিপুল অর্জন। এই অর্জন উপলক্ষে মঙ্গলবার সারাদেশে উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকাও হয়ে উঠল আনন্দের নগরী। এদিন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আলোক উৎসবের আয়োজন করে। মূল আয়োজনটি ছিল হাতিরঝিলের মুক্তমঞ্চে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করেন দিনাত জাহান মুন্নী, সুজন আরিফসহ একাধিক শিল্পী। এরপরই শুরু হয় আতশবাজি। উপস্থিত শত শত মানুষ আলোর উৎসবে মেতে ওঠেন। একইরকম উৎসবমুখর ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে স্থাপিত মঞ্চ থেকে একের পর এক অগ্নিগোলক ছুড়ে দেয়া হয়। এভাবে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ। এই আনন্দ আরও বড় হোক। বিস্তৃত হোক। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×