ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আশ্রয় শিবিরে দিনে গড়ে ৬০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৮ মে ২০১৮

আশ্রয় শিবিরে দিনে গড়ে ৬০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০টি রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইনে গত বছরের আগস্টের সহিংসতার পর পালিয়ে বাংলাদেশে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের আশ্রয় দেয়া হয় কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে। গত নয় মাসে এই শরণার্থী শিবিরে জন্ম নিয়েছে ১৬ হাজার শিশু। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ দিয়েছে এই পরিসংখ্যান। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির নিউইয়র্কের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। ইউনিসেফ বলেছে, গত বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে কমপক্ষে ১৬ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের একজন প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেইগবেদার বলেছেন, ‘নিজ দেশ থেকে দূরে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে প্রতিদিন জীবনের প্রথম নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রায় ৬০টি শিশু। তারা জন্ম নিচ্ছে সেইসব মায়ের গর্ভে যারা বাস্তুচ্যুত, সহিংসতার শিকার, আতঙ্কগ্রস্ত ও ধর্ষণের শিকার। সুষ্ঠুভাবে জীবনের সূত্রপাত ঘটার যে পরিবেশ এসব আশ্রয় শিবিরে সে পরিবেশ অনেক দূরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ওই সব নারী ও শিশুরা, যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের জন্য বিশেষ সহযোগিতার প্রয়োজন। কারণ, বেশির ভাগ নারী ও মেয়ে শিশু কলঙ্ক এবং নিপীড়নের ভয়ে সামনে এগিয়ে আসার সাহস করতে পারছে না।’ গত নয় মাসে শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেয়া মাত্র তিন হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। অর্থাৎ প্রতি ৫টি শিশুর মধ্যে একটি শিশু স্বাস্থ্যসেবা পেয়েছে। ধারণা করা যায়, মাত্র ১৮ শতাংশ মা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলছে, ১৬ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র ৩ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছে এসব স্থানে। নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের পরামর্শ দিয়েছে ইউনিসেফ। যেসব নারীর চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রায় ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করেছে তারা। বেইগবেদার বলেন, নতুন জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশু, যারা ধর্ষণের কারণে জন্ম নিচ্ছে তাদের প্রকৃত সংখ্যা জানা অসম্ভব ব্যাপার। তবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, যেসব মা সন্তান জন্ম দিতে যাচ্ছেন এবং প্রতিটি শিশু জন্ম নেয়ার পর যেন সহায়তা ও সেবা পান। জাতিসংঘের হিসাব মতে, এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৫ হাজার। তাদের অনেকে আগের সহিংসতায় পালিয়ে এসেছেন। মিয়ানমারে বসবাসকারী রোহিঙ্গার মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১১ লাখ। তাদের তারা সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী বিশ্বে। তাদের নেই কোন নাগরিকত্ব। তাদেরকে মিয়ানমার দেখে থাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। তারা দাবি করে, এরা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে মিয়ানমারে বসতি গড়েছে। আগস্টে সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরুর পর তাদের ভেতর থেকে প্রায় ৭ লাখ চলে আসে বাংলাদেশে। ব্যাপক বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, অগ্নিসংযোগ, গণধর্ষণ, যৌন সহিংসতার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ, মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো এর নিন্দা জানিয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিচার করা হবে কিনা এ জন্য তদন্তের অনুমতি চাওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।
×