ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বছরে ৫ কোটি ডলার আয়ের টার্গেট

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক বিপণন কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৮ মে ২০১৮

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক বিপণন কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র বাণিজ্যিক বিপণনের কাজ শুরু হয়েছে। বছরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের টার্গেট নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) কাজ শুরু করেছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান ও উজবেকিস্তানের সঙ্গে বিসিএসসিএল যোগাযোগ করেছে। ওই সব দেশের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পুরোদমে আসা শুরু হলে বিপণন কাজের জন্য দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি হবে। বিসিএসসিএল এমডি সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল) এমডি সাইফুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে পুরোদমে বার্তা পাঠাতে শুরু করতে আরও দুই থেকে আড়াই মাস লাগবে। এই দুই আড়াই মাসের মধ্যে বিদেশে স্যাটেরাইটের বাজার তৈরি করা হবে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান ও উজবেকিস্তানে আমাদের স্যাটেলাইটের বড় বাজার রয়েছে। এসব দেশের অনেক দেশেরই কোন স্যাটেলাইট নেই। তাদের টেলিকম ও ক্যাবল টিভির জন্য আমাদের স্যাটেলাইটের প্রয়োজন হবে। আমরা এখন থেকেই চেষ্টা করব ওই সব দেশে ‘মার্কেটিং’ করার। উল্লিখিত দেশগুলোতে মার্কেটিং করাতে পারলে বছরে দেশের আয় হবে ৫ কোটি মার্কিন ডলার। সাইফুল ইসলাম বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ ও স্যাটেলাইট টিভির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই বড় ভূমিকার পাশাপাশি দেশের জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশ কিন্তু দুটি বিষয় মাথায় রেখে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। একটি দেশের টেলিযোগাযোগ সুবিধা ও জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়া আর অন্যটি বাণিজ্যিক দিক। বাণিজ্যিক দিক নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। তাদের কাছে স্যাটেলাইটের ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। আমরা স্যাটেলাইটকে টাকার অংক দিয়ে বিচার করছি না। এটা বাংলাদেশের মর্যাদার একটি বিষয়। মর্যাদা কখনও টাকা দিয়ে কেনা যায় না। পৃথিবীর ৫৭ দেশের কাতারে এখন বাংলাদেশ। যারা স্যাটেলাইট নিয়ে বিরূপ কথা বলছেন- তারা অল্প দিনের মধ্যে স্যাটেলাইটের সুফল পেতে শুরু করবেন। তখন আর তাদের কিছু বলার থাকবে না। বিটিআরসি জানিয়েছে, মহাকাশে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার বেগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিজ অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরও ৩/৪ দিন সময় লাগবে নিজের অবস্থানে স্থাপন হতে। উৎক্ষেপণের ৫ দিন পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। গুগল ইমেজে দেখে বিটিআরসি বলছে, স্যাটেলাইটটি আফ্রিকার গায়ানার ওপর দিয়ে অতিক্রম করছে। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণকারী একটি ওয়েবসাইটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সমুদ্র তীরবর্তী গায়ানা অতিক্রম করে উত্তর ও দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট পথের দিকেই যাচ্ছে। এ সময় ৬ দশমিক ৫৪ ডিগ্রী অক্ষাংশ ও ৫৭ দশমিক ৯৯ দ্রাঘিমাংশ বরাবর অবস্থান করছে। স্যাটেলাইটের ইমেজে স্যাটেলাইটের অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। স্যাটেলাইটটি নাইজিরিয়া-কেনিয়া-ভারত মহাসাগর-পাপুয়া নিউগিনির ওপর দিয়ে ফিলিপিন্স হয়ে কক্ষপথে স্থাপন হবে। স্যাটেলাইট পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানিযেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের জন্য রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ নেয়া হয়। নির্দিষ্ট ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রীতে যেতে আরও ৩/৪ দিন সময় নেবে। স্যাটেলাইটটি নিজস্ব কক্ষপথে স্থাপন হওয়ার পর থেকেই গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশনে বার্তা পাঠাতে শুরু করবে। তবে কক্ষপথে পৌঁছানোর আগে স্যাটেলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত কোন তথ্য জানা যাচ্ছে না। কক্ষপথে স্থাপন হলে স্যাটেলাইট সম্পর্কে অনেক কিছু বলা সম্ভব হবে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কক্ষপথে পৌঁছানোর পর আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট থেকে বার্তা আসা শুরু হবে। তখন দেশের টেলিযোগাযোগ, ক্যাবল টিভিসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ শুরু হবে। বিদেশেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্যাটেলাইটের ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেয়া যাবে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। ২০টি ট্রান্সপন্ডার দেশের জন্য ব্যবহার হবে- বাকি ২০ ট্রান্সপন্ডার বিদেশে ভাড়া দেয়া বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভাড়া দিতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে এই বিপুল অংকের টাকা ভাড়া দিতে হবে না। দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে।
×