ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেল আইন মেনে না চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৭ মে ২০১৮

রেল আইন মেনে না চলায় দুর্ঘটনা বাড়ছে

সমুদ্র হক ॥ রেললাইনের দুই ধারে ১০ ফুট করে জায়গা ফাঁকা রাখা এবং সার্বক্ষণিক ১৪৪ ধারা জারি থাকার বিদ্যমান আইন মেনে চলা হয় না। রেললাইনের ওপর দিয়ে জন চলাচলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। রেলগাড়ি চলাচলও নির্বিঘœ থাকছে না। জেলা শহর ও কোন কোন উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রেললাইনের ধারের জায়গায় রেলভূমিতে গড়ে উঠেছে অবকাঠামো। দখল হয়ে যাচ্ছে রেলভূমি। এ দিকে বেশিরভাগ রেলগেট অরক্ষিত। সেখানেও হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেলের আইন মেনে না চলার কারণে গেল কয়েক বছরে রেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। এক জরিপে দেখা যায়, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচল, লেভেল ক্রসিং পারাপার এবং রেলপথের ধারে অবৈধ স্থাপনায় ধাক্কা লেগে বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে ও ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ। অপমৃত্যুর এই লাশ উদ্ধার ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে রেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে বছরে গুনতে হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। অপমৃত্যু মামলা দায়ের হওয়ার পর যে পুলিশ অফিসার তদন্ত পরিচালনা করবেন তার জন্য বরাদ্দ আছে ৪ হাজার টাকা। এই অর্থ বহন করে পুলিশ প্রশাসন। দেশে রেলপথ রয়েছে ২ হাজার ৮শ’৭৮ কিলোমিটার। এর সঙ্গে প্রায় ৩ হাজার লেভেল ক্রসিংয়ের (রেল গেট) ১৩শ’রও বেশি অরক্ষিত। এইসব লেভেল ক্রসিংয়ের কিছু অবৈধ। গ্রামীণ পাকা সড়ক নির্মাণের সময় রেলপথ অতিক্রমে রেল বিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়নি। রেলভূমির অনেক দখলকারী সুবিধামতো স্থানে রাস্তা গড়ে তুলেছে। এই রাস্তার মধ্যেও পড়েছে অবৈধ লেভেল ক্রসিং। অরক্ষিত ও অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে কোন গেট বা শিকল নেই। কোন পাহারাদার নেই। রেললাইন নিরাপদ রাখতে ১৮৬১ সালে আইন বিধি প্রণয়ন করা হয়। এই বিধির ৫ নম্বর আইনের ১২ ধারায় রেললাইনের দুই ধারে ১০ ফুট করে জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। রেললাইনের উভয় ধারে ১০ ফুট করে ২০ ফুট স্থানে সার্বক্ষণিক ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের আইন অনুযায়ী ওই সীমানার মধ্যে কাউকে পাওয়া গেলে ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। ওই সীমানার মধ্যে গবাদি পশু চরলে তাও আটক করে বিক্রির পর অর্থ সরকারের খাতে জমা দেয়ার বিধান আছে। এই আইন থাকার পরও বাস্তবতা হলো- আইন শুধু বইতে রয়েছে। প্রয়োগ হচ্ছে না। পুলিশের একজন কর্মকর্তা বললেন, আইন প্রয়োগ করতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল বেড়ে গিয়েছে। অনেকেই রেললাইনের ওপর দিয়ে চলার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কেউ ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে হাঁটেন ও কথা বলেন। এ সময় তার কোন কিছু খেয়াল থাকে না। রেল ইঞ্জিনের হুইসেলও শুনতে পান না। এভাবে চলায় রেলে কাটা পড়েন। কেউ আবার আত্মহননের জন্য রেললাইন বেছে নেয়। রেললাইনের ধারে অবকাঠামো গড়ে তোলায় ট্রেন চলাচল নির্বিঘœ না থাকায় মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে। বগুড়া রেল স্টেশন থেকে পূর্ব দিকে অল্প দূরেই রেললাইনের ধার ঘেঁষে অনেকটা জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে পাকা ভবনের মার্কেট। ধার ঘেঁষেই ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়াও আছে ভাসমান দোকানি। ট্রেন চলার সময় সরে যায়। ফের বসে। এইসব স্থানেও মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। ১৮৬১ সালের রেল আইনের ১২ (ঘ) ধারায় রেললাইনে পড়ে থাকা লাশের পরিচয় ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণে বরাদ্দ আছে মাত্র ৮ টাকা। এ দিকে একাধিক সূত্র জানায় রেলে কাটা কোন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার থেকে দাফন বা শেষকৃত্য সম্পন্ন হতে অনেক অর্থের ব্যয় হয়। লাশ উদ্ধারের পর মর্গে পৌঁছাবার খরচ। পোস্ট মর্টেমের পর ডোমের আলাদা খরচ আছে। রেলপথের আইন থাকার পরও তা মেনে না চলার বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রেল পুলিশের জনবল অনেক কম। এ কারণে ইচ্ছে করলেই রেললাইনের ওপর দিয়ে জনচলাচল বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া রেলের আইন অনেকরেই অজানা। এ নিয়ে কোন প্রচার নেই। রেল দুর্ঘটনা রোধে দরকার সচেতনতা। এই বিষয়ে রেল বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, রেললাইনের হতাহত রোধে রেল মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। তবে এর আগে বিষয়টি সাধারণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। রেলের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চলে। তবে অনেক সময় প্রভাবশালীদের কারণে ফের দখল হয়ে যায়।
×