ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাসে যৌন হয়রানি-ছাত্রীর মা-ভাইকে আটকের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ মে ২০১৮

বাসে যৌন হয়রানি-ছাত্রীর মা-ভাইকে আটকের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসে যৌন হয়রানির শিকার তেজগাঁও কলেজের ছাত্রীর মা ও ভাইকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে তেজগাঁও কলেজের সামনে থেকে তাদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী এ কথা জানান। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসে তেজগাঁও কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করে ওই বাসের ড্রাইভার ও হেলপার। ওই বাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ‘ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৭০৩’। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী জানান, ঘটনার পর নাকি ওই বাসের চালক ও হেলপারের বিচার করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষকে ভাল করে জানানোর জন্য বুধবার সকালে আমি, আমার মা ও ভাইসহ কলেজে আসি। ওই ঘটনায় কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীও ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর অবস্থায় ছিল। এ অবস্থায় শেরে বাংলানগর থানা থেকে পুলিশ এসে আমার মা ও ভাইকে সামনে থেকে ধরে নিয়ে যায়। ওই কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, যার সঙ্গে ঘটনা তাকে না জানিয়ে কিভাবে বিচার হয়? প্রিন্সিপালও বিষয়টি কাউকে জানায়নি। এ অবস্থার মধ্যে আবার ভুক্তভোগীর মা ও ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা তাদের ব্যথিত করেছে। এমন ঘটনার কারণে দোষীরা আশকারা পাবে। জানতে চাইলে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণী তার মাসহ থানায় এসেছিল। তারা আমার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের কোন অভিযোগ নেই। আমরা তাদের বক্তব্য শুনেছি। তারা চলে গেছেন’। যৌন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের জানান, সকালে দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসে বাড্ডার বাসা থেকে লিংক রোড হয়ে তেজগাঁও কলেজে যাচ্ছিলেন। বাসটি লিংক রোড থেকে যাত্রী নিয়ে গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরে পৌঁছার আগে জ্যামে আটকা পড়ে। এ সময় বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যান। কিন্তু তিনি ও এক বৃদ্ধ লোক বাসে থাকেন। তিনি চালকের পেছনের আসনে বসা ছিলেন। এ সময় বাস চালক ও হেলপার তাকে অনেকটা একা পেয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে নানা বাজে কথা বলতে থাকেন। নানা রকম নারীবিদ্বেষী কথাবার্তা ও কটূক্তি করতে থাকে। হেলপার ভাড়ার কথা বলায় তিনি স্টুডেন্ট ভাড়া দিতে চাইলে হেলপার তা নিতে রাজি হয় না। ভাড়া আদায় কেন্দ্র করে হেলপার তাকে নানা অশ্রাব্য কথা বলতে থাকে। তিনি বলেন, এক পর্যায়ে তারা আমাকে উদ্দেশ করে এমন এমন কথা বলতে থাকে যা প্রকাশ করার মতো নয়। আমি নিরুপায় হয়ে কলেজের এক বড় ভাইকে মোবাইলে মেসেজ পাঠাই। কিন্তু তিনি দূরে থাকায় সহযোগিতা করতে পারেননি। পরে গুলশান ১ নম্বরে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে থাকার পর ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে থেকে অনেক যাত্রী ওঠেন। তারা তিতুমীর কলেজের সামনে নেমে যায়। এক পর্যায়ে আমি আবার একলা হয়ে পড়ি। পুরো রাস্তায় জ্যাম। তারা আমাকে বাস থেকে নামতে দেয় না। গেট আটকে দেয়। এবার আমি একটু পেছনে গিয়ে বসি। ফার্মগেটে গাড়ি আসার পরেও তারা আমাকে নামতে দিচ্ছে না। ডেইলি স্টারের সামনের ওভারব্রিজ পার হওয়ার পর আমি নামতে পারি। নামার সময় আমার কোমরে জোরে একটা চাপ দেয়। আমাকে আবারও টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, এখনও কোমরে ব্যথা হচ্ছে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থী বলেন, তারা আমাকে বলছে গাড়ি চাপা দিয়ে নাকি আমার মতো অনেক মেয়েকে হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নাকি তাদের এমন ক্ষমতা দিয়েছে। যৌন হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থীর মা বলেন, মেয়ের কণ্ঠে এমন বর্ণনা শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমি নিজেও একজন মহিলা। চাকরির সুবাদে রাস্তাঘাটে নিয়মিত চলাফেরা করি। প্রায় সময় নিজেও হেনস্থার শিকার হই। প্রতিবাদ করলে অনেক সময় উল্টো ‘খারাপ মহিলা’ বলা হয়। আমরা আইনের আশ্রয় এখনও নিইনি। তবে সবার সহযোগিতা পেলে নেব।
×