ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৭ মে ২০১৮

কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সার্ভার সমস্যা, ফিরতি এসএমএস না আসা, ভুয়া আবেদনকারী তৎপরতাসহ নানামুখী সমস্যার কারণে কিছুটা জটিলতায় পড়েছে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া। টানা চারদিন ধরে সমস্যার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সারাদেশে একাদশে অনলাইন ও মোবাইলে ভর্তির আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা। দু’একটি বোর্ডের সমস্যা কাটতে শুরু করলেও কয়েকটি শিক্ষা বোর্ডে সমস্যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাই কমে গেছে। কোথাও আবেদনের জন্য এসএমএস পাঠালে ফিরতি এসএমএস আসছে পরের দিন। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি সহয়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে কথা বলেছেন বোর্ড চেয়ারম্যানরা। শিক্ষার্থীদের দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন তারা। তবে আন্তঃ শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক এবং সচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী বুধবার সন্ধ্যায় বলেছেন, সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে। বুধবার সকাল থেকেই সার্ভার সমস্যা কমেছে। অন্যান্য সমস্যাও প্রায় নেই বললেই চলে। ফিরতি এসএমএস যাতে দ্রুত পেতে পারে সেজন্য ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েটকে বলা হয়েছে। তার পরেও যে সমস্যা হচ্ছে তার দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, দেশের সরকারী-বেসরকারী কলেজে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনলাইন ও এসএমএসে আবেদন জমা নেয়া চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। ভর্তি নীতিমালা বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক-ভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। তবে আবেদন চলবে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও। গেল বছরের মতো বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন এ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) এবং কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ একাদশে ভর্তির আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণে কারিগরি সহয়তা দিচ্ছে। বুধবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায় অন্য একটি মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব আসছেন তার সন্তানের ভর্তির বিড়ম্বনার বিষয় জানাতে। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার আমার সন্তানের ভর্তির জন্য এসএমএস পাঠিয়েছি কিন্তু ২১ ঘণ্টায়ও ফিরতি এসএমএস আসেনি। এখন বুঝতেও পারছিনা কি হলো। তাই বিষয়টি জানাতে এসেছি। বিভিন্ন সমস্যার কারণে আবেদন সম্পন্ন করতে না পেরে ভর্তিচ্ছুরা আসছেন ঢাকা বোর্ডেও। কেউ এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করলেও ফিরতি মেসেজ পাননি। কারও আবেদন অসম্পন্ন অবস্থায় চূড়ান্ত দেখানো হয়েছে। আবার কারও আবেদন করার সময় তা সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। ঢাকা বোর্ডে আসা অভিভাবক সরওয়ার বলছিলেন, মিরপুরের বাংলা স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে আমার সন্তান জিপিএ-৫ পেয়েছে। এখন ভর্তির জন্য এসএমএস পাঠালেও ফিরতি এসএমএস পাচ্ছি না। বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডে জানিয়েছি। কর্মকর্তারা বলেছেন, সমস্যার সমাধান হচ্ছে। বুয়েটকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে যাতে দ্রুত ফিরতি এসএমএস পাওয়া যায়। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফি নেয়া হচ্ছে তাদেরও বলা হয়েছে দ্রুত কাজ করার জন্য। প্রায় একই অভিযোগ করেছেন আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। এদিকে ভুয়া আবেদনকারী তৎপরতায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিজেদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে শিক্ষার্থীদের না জানিয়েই তাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান আবেদন করে ফেলছেন। যাতে প্রার্থী চাইলেও অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করতে না পারেন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হক বলছিলেন, একজনের আবেদন আরেকজন করে দিচ্ছে বলে অনেক অভিযোগ আসছে। এটা দু’কারণে হতে পারে। প্রথমত দোকান থেকে হয়ত আবেদন করতে গিয়ে কেউ রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে ভুল করছেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের অনুকূলে আবেদন করিয়ে রাখতে পারেন বলে আমরা সন্দেহ করছি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। তবে কেউ অভিযোগ নিয়ে আসলে আমরা তার আবেদনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রী বুধবার বিকেলে জনকণ্ঠ অফিসে ফোন করে জানান, বুধবার সকালে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখি অন্য কেউ করে ফেলেছে। বিষয়টি বাসায় জানালে বাবা শিক্ষা বোর্ডে কথা বলেছেন। অন্য কোন কলেজ তার আবেদন করে ফেলছে বলে সন্দেহ করছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সভার থেকে এসেছিলেন রাশেদ। তারও আবেদন অন্য কেউ করেছে। তিনি বলেন, স্থানীয় একটি দোকানে ভর্তির আবেদন করার সময় দেখি আবেদন আগেই কেউ করে ফেলেছে। বিষয়টি জানাতেই বোর্ডে এসেছি। বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগের আবেদন বাতিল হবে বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ শিক্ষা বোর্ডে প্রথম চার দিনেই কয়েকশত ভুয়া আবেদনের অভিযোগ এসেছে। শিক্ষার্থীদের অজান্তে এসব আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে এ কাজ করছে। এমন অভিযোগ ভর্তি কার্যক্রম শুরুর দিন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরিদর্শন শাখা ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, বেশ কিছু ভুয়া আবেদনের অভিযোগ এসেছে। এসব আবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেয়া হবে। শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে আবেদন করাটা দ-নীয় অপরাধ। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সচিব বিপ্লব কুমার ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সার্ভারে সমস্যার কারণে তার বোর্ডে আবেদন পড়ছে খুবই কম। এসএমএস পাঠালে ফিরতি এসএমএস পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আমরা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব সাহেদুল খবীর চৌধুরী বুধবার সন্ধ্যায় বলেছেন, সমস্যা এখন খুব একটা নেই। তার পরেও বুয়েটকে বিষয়টিকে কাজ করতে বলা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। বুধবার সকাল থেকেই সমস্যা অনেকখানি কেটে গেছে। তবে টাকা পাঠানোর ফিরতি এসএমএস আসতে দেরি হওয়ার কারণ কারিগরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফিরতি এসএমএস পাঠাতে একটু দেরি হতে পারে। তবে তার পরেও আরও দ্রুত কিভাবে করা যায় কিংবা এসএমএস নিয়ে যাতে উদ্যোগ কাটানো যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ভুয়া আবেদনের অভিযোগ আসছে। অভিযোগ আসলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এ বছর প্রথমবারের মতো এ অপরাধকে দ-নীয় হিসেবে ভর্তি নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সার্ভারের সমস্যার বিষয়ে অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে। বুধবার সকাল থেকেই সার্ভার সমস্যা কমেছে। অন্যান্য সমম্যাও প্রায় নেই বললেই চলে। ফিরতি এসএমএস যাতে দ্রুত পেতে পারে সেজন্য ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বুয়েটকে বলা হয়েছে।
×