ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১০৩ কোটি টাকার প্রকল্পে ভারত সরকারের ঋণ ১৪৪০ কোটি

চার মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ শ’ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ মে ২০১৮

চার মেডিক্যাল কলেজে পাঁচ শ’ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ ভারত সরকারের দ্বিতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থে দেশের গুরুত্ব¡পূর্ণ চারটি মেডিক্যাল কলেজে ৫শ’ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে পাবনা, যশোর, নোয়াখালী ও কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। বর্তমানে এসব কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও আবাসিক হাসপাতাল সুবিধা নেই। উদ্যোগ বাস্তবায়নে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারত সরকারের ঋণ সহযোগিতা হিসেবে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যয়ের আশা করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৬৩৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল হতে দেয়া হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওই চার মেডিক্যাল কলেজের হাসপাতালে টারশিয়ারি লেভেলের স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর এরই মধ্যে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হতে পারে। তবে প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে পাঁচতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, ইন্টার্ন ডক্টরস ডরমিটরি নির্মাণ, চিকিৎসক-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন নির্মাণ। এছাড়াও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের জন্য আধুনিক মেডিক্যাল যন্ত্রপাতিও প্রকল্পের আওতায় সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ভারতের দ্বিতীয় এলওসির আওতায় স্বাস্থ্য খাতের পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা। এর মধ্যে পটুয়াখালী ও জামালপুরে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন বিষয়ক দুটি প্রকল্প ইতোমধ্যে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ দুটি প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষেরও সায় রয়েছে। তবে রাঙ্গামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন এবং দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প প্রাথমিক তালিকায় থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব প্রকল্পের অনুকূলে প্রাপ্য ঋণ প্রস্তাবিত প্রকল্পে স্থানান্তরের জন্য ইআরডি ও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে অনুরোধ জানায়। অর্থায়নের ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সায় পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরুর কথা। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সোমবার বলেন, আমরা প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য কার্যক্রম বিভাগে পাঠিয়েছি। মঙ্গলবার একনেক সভা হলে হয়তো এটি উপস্থাপন হতো। কিন্তু যেহেতু পরবর্তী একনেক হতে এখনও অনেকদিন বাকি, তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকারীভাবে টারশিয়ারি স্বাস্থ্য সেবামূলক কার্যক্রম সাধারণত জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পরিচালিত হয়ে থাকে। টারশিয়ারি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ দিকটি বিবেচনায় এনে দেশের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় চারটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেক্টর কর্মসূচীর আওতায় এসব মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবন তৈরি করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল কলেজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা না করায় একদিকে এসব মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ উন্নত চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় বিদ্যমান চারটি মেডিক্যাল কলেজে ৫ শ’ শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য এই প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
×