ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরমাণু কর্মসূচী বন্ধে চাপ দিতে থাকলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা ॥ উত্তর কোরীয় উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের হুমকি

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১৭ মে ২০১৮

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের হুমকি

উত্তর কোরিয়া বলেছে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করার জন্য চাপ দিতে থাকলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠকে যোগ নাও দিতে পারেন কিম জং উন। ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যকার বৈঠকের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১২ জুন। উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম কাই গওয়ান বলেছেন, ‘অশুভ অভিপ্রায় থেকে যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি এর জন্য মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন অঙ্গুলী নির্দেশ করেন। বিবিসি। গওয়ান বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি বোল্টন প্রায়ই আমাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে থাকেন। তিনি অতীতেও আমাদের সমালোচনা করেছেন। তার প্রতি আমদের মনোভাব আমরা লুকাতে চাই না।’ কোরিয়া উপদ্বীপ পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরই ট্রাম্প উনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। তবে কিভাবে কোরিয়া উপদ্বীপ পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। উত্তর কোরিয়ার তাদের প্রধান পরমাণু স্থাপনা বন্ধের কাজ প্রত্যক্ষ করার জন্য চলতি মাসে বিদেশী গণমাধ্যম কর্মীদের সেদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সিউল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জনান, রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র থাকা প্রয়োজন, দেশটি বরাবর এ কথা বলে এসেছে। এখন তারা এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করল। গওয়ানের বিবৃতিটি দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কেবল একতরফাভাবে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে আলোচনায় বসার কোন আগ্রহ তাদের নেই। এ রকম চলতে থাকলে ১২ জুন অনুষ্ঠেয় শীর্ষ বৈঠকের বিষয়টি আমরা পুনরায় বিবেচনা করতে বাধ্য হব’। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়া আলোচনায় বসতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সেরকম সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তারা অযৌক্তিক কথা বলে উস্কানির পথ বেছে নিয়েছে। গওয়ান উত্তর কোরিয়ার সরকারের একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি। তিনি ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি যে বিবৃতি দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত মত হলেও শীর্ষ নেতা উন সেটি অনুমোদন করবেন বলে সহজেই ধরে নেয়া যায়। গওয়ানের বিবৃতিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা আগে উত্তর কোরিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে একটি পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল। পিয়ংইয়ং অবশ্য বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিবাদ জানাতে তারা এটি করেছে। পিয়ংইয়ং মনে করে কোরিয়া উপদ্বীপেকূটনৈতিক প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছে তখন এ ধরনের পদক্ষেপ উস্কানিমূলক। উগ্র ডানপন্থী রক্ষণশীল বোল্টন এর আগে বলেছিলেন উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এক তরফা সামরিক পদক্ষেপ নেয়াটা বৈধ হবে। রবিবার এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া লিবিয়ার মডেল অনুসরণ করতে পারে। অস্ত্র কর্মসূচী পরিত্যাগ করার মাধ্যমে লিবিয়া অর্থনৈতিক সহায়তা নিশ্চিত করেছিল। গওয়ানের বিবৃতিতে এর প্রতিক্রিয়ায় বলা হয় উদাহরণটি যথাযথ নয়। কারণ উত্তর কোরিয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ। অন্যদিকে বৃহৎশক্তিগুলো ইরাক ও লিবিয়াকে ধ্বংস করে সেখানে নিজেদের কর্মসূচী বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। গওয়ান বলেন, ট্রাম্প যদি পরমাণু কর্মসূচী বন্ধ না করলে আলোচনায় বসবেন না, এ কথার ওপর স্থির হয়ে থাকে তবে তিনি পূর্বসূরিদের চেয়েও বেশি ব্যর্থ হবেন। গওয়ানের বিবৃতিটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি সতর্ক সঙ্কেত বলেই বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছে। উত্তর চায় মর্যাদার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে, কারও চাপে পড়ে নয়।
×