ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘হেক্সা’ মিশনে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দল চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১৬ মে ২০১৮

‘হেক্সা’ মিশনে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দল চূড়ান্ত

জাহিদুল আলম জয় ॥ লুই ফিলিপ সোলারির অধীনে ২০০২ সালে ‘পেন্টা’ অর্থাৎ পঞ্চম শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। এরপরের তিন আসরে (২০০৬, ২০১০, ২০১৪) সীমাহীন সম্ভাবনা জাগিয়েও ব্যর্থ হয় ফুটবল পাগল দেশটি। এবার আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বুনছে পেলের দেশ। ‘হেক্সা’ অর্থাৎ ষষ্ঠবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে পরীক্ষিত কোচ তিতের কাঁধে দায়িত্ব সঁপেছে ফুটবল ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দেশটি। এবার বিশ্বকাপের ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে উন্মুখ হয়ে আছে গোটা ব্রাজিল। আগামী ১৭ জুন থেকে শুরু হবে শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের এই মিশন। সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে সোমবার রাতে রিও ডি জেনিরোতে সংবাদ সম্মেলনে ব্র্রাজিলের ২৩ সৈনিকের নাম ঘোষণা করেছেন কোচ তিতে। ব্রাজিল স্কোয়াড ঘোষণা করার পর দল নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। তবে এবারের দলটিকে দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ বলছেন প্রায় সবাই। শুধু ইনজুরির কারণে দানি আলভেজ নেই। তার অভাব খুব একটা অনুভূত হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বাদ পড়ার মধ্যে আছেন তারকা ডিফেন্ডার ডেভিড লুইজ। আর চমক হিসেবে দলে জায়গা পেয়েছেন স্ট্রাইকার টাইসন। ইনজুরির কারণে বাইরে থাকলেও নেইমারকে সামনে নিয়েই মিশন শুরু করবে ব্রাজিল। পিএসজি তারকা ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে পারেন বলেও জানা গেছে। আর সোমবার থেকে শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপের একমাসের ক্ষণগণনা। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ১৪ জুন শুরু হবে রাশিয়া বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফির লড়াই। কে জিতবে এই বিশ্বকাপ। এখন থেকেই এটা বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। বিশ্বকাপের জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত আয়োজক রাশিয়া। ১১ শহরের ১২ ভেন্যুতে চলছে প্রস্তুতির শেষ তুলি দেয়ার কাজ। মাঠ, গ্যালারি, ফান জোন- কোন কিছুই বাদ নেই প্রস্তুতের তালিকা থেকে। প্রতিটি শহরকেই গড়ে তোলা হয়েছে এক একটি বিশ্বকাপ নগরী হিসেবে। এখন নেইমারের ফিটনেসই ব্রাজিলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের ক্লাব শাখতার ডোনেস্কের মিডফিল্ডার ফ্রেডও ডাক পেয়েছেন তারকা সমৃদ্ধ ব্রাজিল দলে। রাইটব্যাক পজিশনে রিয়াল মাদ্রিদের মার্সেলোর সঙ্গে আছেন এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফিলিপে লুইস। আর লেফটব্যাক দানি আলভেজ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় ডাক পেয়েছেন করিন্থিয়ান্সের ফাগনার ও ম্যানচেস্টার সিটির ডানিলো। আগামী ২৬ মে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ ও লিভারপুল। এই দুই দলের খেলোয়াড় ছাড়া তিতের ডাক পাওয়া সবাই আগামী ২১ মে ব্রাজিলে একত্রিত হবে। আর এক সপ্তাহ পর লন্ডনে টটেনহ্যাম হটস্পারের ট্রেনিং সেন্টারে ঘাঁটি করবে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এরপর আগামী ৩ জুন লিভারপুলের মাঠ এ্যানফিল্ডে ক্রোয়েশিয়া ও ১০ জুন ভিয়েনায় অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন নেইমার-মার্সেলোরা। আগামী ১৭ জুন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হবে ব্রাজিলের। ‘ই’ গ্রুপে তাদের অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কোস্টারিকা ও সার্বিয়া। দল ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ব্রাজিল বস তিতে জানিয়েছেন, তার দল এবার অন্যতম ফেবারিট। তিতে বলেন, ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্রাজিল অন্যতম ফেবারিট। ধারাবাহিকতার বিচারেও। আমি বিশ্বাস করেই এ কথা বলছি। আমার এই কথাকে কেউ যেন বাড়াবাড়ি মনে না করেন। দলের সেরা তারকা নেইমারের কারণে নিজেদের শক্তিশালী মনে করছেন তিতে। এ প্রসঙ্গে তারকা এই কোচ বলেন, নেইমারের অন্তর্ভুক্তিতে আমরা বেশ ভালই শক্তিশালী দল। সে বিশ্বের সেরা তিনজন ফুটবলারের একজন। সে এই মুহূর্তে তার ক্যারিয়ারের সেরা সময় অতিক্রম করছে। তবে তাকে ঘিরে একটি শক্তিশালী দলই দরকার। ২০১৪ বিশ্বকাপে নিজ দেশে পারেনি ব্রাজিল। সেবার নেইমার ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়লে সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে গোহারা হেরে বিদায় নিতে হয় পেলের দেশকে। তবে এবারের ব্রাজিল দলটি দারুণ ব্যালেন্সড। দলটির মূল শক্তিই হচ্ছে দলের গভীরতা ও ভারসাম্য। এবার ব্রাজিল এক নেইমারের ওপর নির্ভরশীল নয়। এই দলে নেইমার ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন তারকা আছেন। এই পরিবর্তনটা এসেছে তিতে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে। তিনি ব্যক্তি বিশেষ নির্ভরতা থেকে দলকে বের করে নিয়ে এসে গড়েছেন পুরোদস্তুর একটা দল। নেইমার ছাড়াও এবারের ব্রাজিল দলে আছেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস, পাউলিনহো, উইলিয়ান, ফিরমিনহো, কুটিনহো, ফার্নান্ডিনহোর মতো তারকা। এরা মধ্যভাগ ও আক্রমণভাগ সামলাবেন। ব্রাজিলের রক্ষণভাগও শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলাতে আছেন অভিজ্ঞ মার্সেলো, কাসেমিরো, ডানিলো, ফাগনার, মিরান্ডা, থিয়াগো সিলভারা কিংবা মারকিনেহাসরা। ব্রাজিলের এক নম্বর গোলরক্ষক এ্যালিসনকে তো বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলা হয়। দলটির গভীরতার কারণে ফিরমিনো, ডানিলো, ডগলাস কোস্টা, উইলিয়ান, পাউলিনহোর মতো খেলোয়াড়দের বসে থাকতে হতে পারে ডাগআউটে। ব্রাজিলের চূড়ান্ত দল ॥ গোলরক্ষক- এ্যালিসন, কাসিও, এডারসন, ডিফেন্ডার-ডানিলো, ফাগনার, ফিলিপে লুইস, মার্সেলো, মারকিনেহাস, মিরান্ডা, থিয়াগো সিলভা, পেড্রো জেরোমেল, মিডফিল্ডার- রেনাটো অগাস্টো, কাসেমিরো, ফিলিপ কুটিনহো, ফার্নান্ডিনহো, পাউলিনহো, উইলিয়ান, ফ্রেড, ফরোয়ার্ডÑরবার্টো ফিরমিনো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, নেইমার, ডগলাস কোস্টা ও টাইসন।
×