ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিয়ানমারকে আগলে রাখায় চীনের সমালোচনা করলেন নিকি হেলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ মে ২০১৮

মিয়ানমারকে আগলে রাখায় চীনের সমালোচনা করলেন নিকি হেলি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার সফর শেষ করে ফিরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ নিয়ে পরিষদে প্রথম বৈঠক হলো সোমবার। সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে জাতিসংঘে মার্কিন দূত নিকি হেলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে কিছু সদস্য দেশের জন্য মিয়ানমারের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদ কোন শক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। খবর বিবিসির। নিকি হেলিকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানিয়েছে, ‘কাউন্সিলের (নিরাপত্তা) কিছু সদস্যের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি সাম্প্রতিক সফরের সময় কোন কোন প্রতিনিধি কাউন্সিলের ঐক্য নষ্ট করেছেন, কাউন্সিল যে বার্তা মিয়ানমারকে দিতে চেয়েছিল, তা দুর্বল করে দেয়া হয়েছে।’ সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করলেও মার্কিন দূত যে চীনেরই সমালোচনা করেছেন তা স্পষ্ট ছিল। কারণ নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে থেকে ব্রিটেন যে বিবৃতির খসড়া প্রস্তাব করেছিল, চীনের চাপে তাতে অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে। এএফপি জানিয়েছে, ব্রিটেনের তৈরি প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের কথা বলা হয়েছিল, যেটা চাপের কারণে বাদ দিতে হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল একটি বিবৃতিতে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়। মার্কিন দূত নিকি হেলিকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা জরুরী হয়ে পড়ছে। সমাধানে মিয়ানমার যাতে বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়, তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা আমাদের কাছে রয়েছে।’এএফপি আরও জানায়, মুখে না বললেও, নিকি হেলি মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। জাতিসংঘে চীনের দূত মা ঝাওশু মার্কিন দূতের সমালোচনার জবাবে বলেন, পরিস্থিতি আরও জটিল না করে, নিরাপত্তা পরিষদের উচিত বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে দ্বিপাক্ষিকভাবে সমস্যার সমাধানে উৎসাহিত করা। কূটনীতিকদের সূত্রে সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের ওপর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আলোচনায় রাশিয়া ও চীনের সমর্থনে কথা বলেছে। এ মাসের শুরুর দিকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের মিয়ানমার সফরের সময় জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, সফরকারী কূটনীতিকরা আউং সান সুচি এবং মিয়ানমারের সেনা প্রধানকে ‘স্পষ্ট করে বলেছেন’ রাখাইনে নির্যাতন, হত্যা এবং ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত না করলে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে। গত সপ্তাহে রয়টার্সের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ এবং হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে যাতে ভবিষ্যতে মিয়ানমারের সেনা-কর্মকর্তাদের আইসিসিতে বিচার হলে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করা যায়। তবে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য- চীন ও রাশিয়ার অবস্থানের কারণে সে পথে এগোনো কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে মতদ্বৈধতা সত্ত্বেও, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের হত্যা-নির্যাতন-ধর্ষণের জন্য অভিযুক্তদের তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফাতু বেনসওদা এই তদন্তের জন্য বিচারকদের কাছে অনুমতি চেয়েছেন। এ বিষয়ে আদালতের তিন জন বিচারক গত সপ্তাহে বাংলাদেশের বক্তব্য জানতে চেয়ে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে এই তদন্ত হবে কিনা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অপরাধ আদালতের বিচারকরা জুনের ২০ তারিখ এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসবেন।
×