ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মির্জাপুরে ইটভাঁটির ধোঁয়া

পুড়ে গেছে সহস্রাধিক একর বোরো ধান

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৬ মে ২০১৮

পুড়ে গেছে সহস্রাধিক একর বোরো ধান

নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর, ১৫ মে ॥ মির্জাপুরে ইটভাঁটির বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে চার গ্রামের সহস্বাধিক একর জমির বোরো ধান জমিতেই মরে লাল হয়ে গেছে। শুধু ধান নয়, ইটভাঁটির ধোঁয়ায় গাছের ফলও কালো হয়ে ঝরে পড়ছে। সরেজমিন উপজেলার মন্দিরা পাড়া, গোড়াইল, কোট বহুরিয়া ও মীর দেওহাটা গ্রামে গিয়ে বোরো জমির এ ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কৃষক কোন প্রতিকার পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে তাদের কাছে কোন আইন নেই, বিধায় তাদের কিছুই করার নেই। ইতোমধ্যে ইটভাঁটির মালিকদের অত্যাচারে কোট বহুরিয়া গ্রামের প্রজেক্ট মালিক আলাল মিয়া, রমে মোল্লা ও মিজানুরসহ চার কৃষকের চারটি বোরো প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মির্জাপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় ২০ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। জমির ধান যখন ফুলে ছড়া বেরিয়ে পাকতে শুরু করেছে ঠিক তখন নিকটবর্তী মীর দেওহাটা ও কোট বহুরিয়া মৌজায় স্থাপন করা কমপক্ষে ১৫টি ইটভাঁটির বিষাক্ত ধোঁয়ায় আবাদ করা কৃষকের বোরো ধান পুড়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। বোরো প্রজেক্ট মালিক জয়েন উদ্দিন বলেন, আমার প্রজেক্টে দেড় হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু প্রজেক্টের সব ধান ইটভাঁটির ধোঁয়ায় পুড়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। ষোল আনার দশ আনা ফলনও হবে না বলে তিনি জানান। কোট বহুরিয়া গ্রামের কৃষক সাবেক মেম্বার দরবেশ আলী, ফারুক হোসেন ও কুতুব আলী জানান গত বছর মির্জাপুর উপজেলায় গিয়ে অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু কোন কাজ হয়নি। একইভাবে স্থানীয় কৃষকলীগ নেতা আবু সাঈদের ইটভাঁটির ধোঁয়া ও গ্যাসে গোড়াইল গ্রামে কয়েক শ’ একর জমির বোরো ধান পুড়ে বিনষ্ট হয়েছে। গোড়াইল গ্রামের কৃষক মাইনউদ্দিন বলেন, ফসল ফলিয়েও এই ইটভাঁটির জন্য আমরা এখন ভাতে মরব। অন্যদিকে লতিফপুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে পাশের দুইটি ইটভাঁটির ধোঁয়ায় বাম্পার ফলনের কয়েক শ’ একর বোরো ধান পুড়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে। ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি বলে ওই এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। ইটভাঁটির ধোঁয়া ও গ্যাসে শুধু বোরো ধানের ক্ষতিই হচ্ছে না কৃষকের বাড়ির গাছের আম, কাঁঠাল ও নারিকেল কালো হয়ে ঝরে পড়ছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জমি পরিদর্শন করেছি। কৃষি বিভাগ কোন জমিতে ইটভাঁটি হচ্ছে তা দেখে নির্মাণের আগে শুধু জমির শ্রেণী নির্ণয় করে তার অনুমতি দেয়। পরিবেশের বিষয়টি দেখবে পরিবেশ অধিদফতর। এ ছাড়া এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তাদের কাছে কোন আইন নেই বলেও তিনি জানা। টাঙ্গাইল জেলা পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকবল সঙ্কট ও আইনের দর্বলতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত টাঙ্গাইল জেলায় ২৪৩টি ইটভাঁটির রেকর্ড করা হয়েছে। এর ১৪১টি ইটভাঁটির ছাড়পত্র না থাকলেও উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তারপরও ১৬টি ইটভাঁটিকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×