ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে ৯৯৯

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৬ মে ২০১৮

গণপরিবহনে ৯৯৯

নিরাপত্তাহীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। অনিরাপদ জীবন ও সময়ে বিপদ যে কোন মুহূর্তে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে ঘাড়ে আর ভয়াবহ বীভৎসতার মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। এই বাংলাদেশে বিপদ যখন আসে তখন মনে হয় চতুর্দিক থেকেই আসে। কখন যে কোন্দিক থেকে বিপদ এসে আঁকড়ে ধরব তার পূর্ব ধারণা অনেক সময় মেলে না। যেমন, দেশে গণপরিবহনে যাত্রী নিরাপত্তা নামতে নামতে শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষত মহিলা যাত্রীদের জন্য পরিবহন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপজ্জনক। অনেক দিন ধরেই পরিবহনে নারী যাত্রীদের হয়রানি, অশালীন আচরণ করে আসা হচ্ছে। আর এখন তো মহামারী আকার ধারণ করেছে যৌন হয়রানি, এমনকি ধর্ষণও। আরও ভয়াবহ যে, ধর্ষণ শেষে মেরে ফেলা হচ্ছে। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে প্রায়শই ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও। প্রতিকারের উপায় নিয়ে কারও মুখে কোন কথা শোনা যায় না। কেন পরিবহন চালক ও হেল্পাররা যাত্রীসেবায় নিয়োজিত থাকাকালেই নারী নিগ্রহে উদ্গ্রীব হয়ে উঠছে তার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও স্পষ্ট যে, এরা সবাই নেশাগ্রস্ত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতে ৯৪ শতাংশ নারী কোন না কোন সময় যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর ৬৬ শতাংশ নারী ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হন। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ, পরিবহনে অত্যধিক ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত বিদ্যুত বাতি না থাকা এবং তদারকির অভাবে নারীদের প্রতি এই যৌন হয়রানি হচ্ছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে পরিচালিত গবেষণায় সড়কে ও গণপরিবহনে যৌন হয়রানির পরিবেশ নির্মূল করা যায় কিভাবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের মাধ্যমে নারীর নিরাপদ চলাচলের পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে আনা হয়। কিন্তু তারপরও হয়রানির মাত্রা বেড়েছে। দিল্লী, কলকাতায় যা ঘটছে গণপরিবহনে ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়তই উঠে আসছে গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ভয়াবহ চিত্র। যাত্রীকল্যাণ সমিতিও বলছে গণপরিবহনে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে যৌন হয়রানির ঘটনা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানে অনাগ্রহ, ঔদাসীন্য ও অবহেলা। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কোন পরিকল্পিত উপায়ও উদ্ভাবন করা হচ্ছে না। অধিকাংশ চালক ও হেল্পার নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। মাদকমুক্ত অবস্থায় যানবাহন চালানোর জন্য তাদের সতর্ক করা হয় না। এমনকি মাদকাসক্ত কিনা তাও পরীক্ষা করা হয় না। যদি পরীক্ষা করা হতো তাহলে অধিকাংশেরই লাইসেন্স বাতিল হতো। এমনিতে অনেকের লাইসেন্সও নেই। প্রতিটি চালকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা তাই জরুরী হয়ে পড়েছে। যৌন হয়রানির আতঙ্ক রুখতে এবং যাত্রী নিরাপত্তা বাড়াতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ নয়া পদক্ষেপ নিয়েছে। বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান এবং নবায়নকালে তারা নিশ্চিত করবে যে, প্রতিটি বাসের ভেতর জরুরী সেবার জাতীয় ‘হেল্পডেস্ক’ নম্বর ৯৯৯ (ট্রিপল নাইন) প্রদর্শন ও গাড়ির নম্বর দৃশ্যমান রাখতে হবে। যাত্রীরা যদি কোন বিপদে পড়েন তবে এই নম্বরে ফোন করে পুলিশী সহায়তা চাইতে পারবেন। এতে বাসটাকে দ্রুত শনাক্ত করা যাবে যেমন, তেমনি অপরাধীরাও সতর্ক হয়ে উঠবে। এমনিতে দেশের যে কোন নাগরিক যে কোন প্রান্ত থেকে এই নম্বরে ফোন করলে সাহায্য পাবেন। জরুরী পুলিশী সহায়তা, অগ্নিনির্বাপণ ও এ্যাম্বুলেন্সÑ তিন ধরনের সহায়তার জন্য এই জরুরী সেবা চালু করা হয়েছে। এখন গণপরিবহনের যাত্রীরাও তা ব্যবহার করতে পারবেন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে পুলিশ এই কলসেন্টার সেবা চালু করে ২৪ ঘণ্টার জন্য। এই ফোনের জন্য কোন অর্থ ব্যয় হয় না। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান কতটুকু হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। গণপরিবহনে মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নয়টি আসন রাখা হলেও তাতে পুরো যাত্রীরা এমনভাবে গেড়ে বসে থাকে যে, মহিলা যাত্রীকে আসন ছেড়ে দিতে চায় না। এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও তা প্রয়োগে নেই ব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত জরিমানা দেয়ার ঘটনার কথা শোনা যায়নি। ফোন করার সুযোগ যদি না দেয় ধর্ষক ও নির্যাতকরা, তবে তো হয়রানি বন্ধ হবে না। ট্রিপল নাইন ব্যবহারের পাশাপাশি চালকদের বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধে সড়ক মন্ত্রণালয় নির্বিকার থাকবে, এটা কারও কাম্য নয়।
×