ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএস নিয়ে নতুন সঙ্কটে ফেসবুক

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৫ মে ২০১৮

আইএস নিয়ে নতুন সঙ্কটে ফেসবুক

অভিযোগের বোঝা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া জাকারবার্গ। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। কাটছে না শনির দশা। কেবল বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে প্রভাব, বির্তকিত বিজ্ঞাপন নীতি কিংবা ক্যামব্রিজ এনালাইটিকার তথ্য ফাঁস নয়। বিশ্বের বৃহত্তম কনটেন্ট পাবলিশার হিসাবে পরিবেশিত সংবাদ নিয়ে অনেকদিন ধরেই ঝামেলা চলছে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর সঙ্গে। তাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘোচাতে খুঁজে পেতে ‘হেড অব নিউজ পার্টনারশিপ’ নিয়োগ করেছিলেন সিএনএনের ক্যাম্পবেল ব্রাউনকে। তাতে যে খুব একটা কাজ হয়েছে, তাও বলা যাচ্ছে না। ব্রাউনের গৃহীত পদক্ষেপ কাজে আসেনি খুব একটা। সম্পর্কের বরফ তো গলেইনি, উল্টো মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডক গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একযোগে ফেসবুকের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য। এদিকে বিশ্বের বৃহত্তম কনটেন্ট পাবলিশার হয়েও, কংগ্রেসে নিজেদের স্রেফ আইটি কোম্পানি দাবি করে নতুন বিপদ ডেকে এনেছেন জাকারবার্গ। বলা যায়, তার এ দাবির কারণে আইনগতভাবে খোলনালচে পাল্টাতে বাধ্য হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। এর মাঝেই ঈষাণ কোনে নতুন কালো মেঘ, ফের বিপাকে মার্ক জাকারবার্গ। এবার ইসলামিক স্টেট সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। ‘দ্য সানডে টেলিগ্রাফ’-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে ‘সাজেস্টেড ফ্রেন্ডস’ নামের ফেসবুক ফিচারটিকে। মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রজেক্ট’ (সিইপি)-এর একদল গবেষক নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনেন আইএস সমর্থকদের অনলাইন কার্যকলাপ। এ জন্য গবেষক দলটি বেছে নেয় ৯৬টি দেশের এক হাজার আইএস সমর্থককে। এবং ধারাবাহিক নজরদারি চালাতে থাকেন তাদের অনলাইন কার্যকলাপের উপর। সেখানে উঠে আসে এক ভয়াবহ চিত্র। বেরিয়ে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে আইএস নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। ফেসবুকের ‘সাজেস্টেড ফ্রেন্ডস’ ফিচারটি মূলত ব্যবহারকারীর ‘সাধারণ স্বার্থে’র উপর কাজ করে। যার ফলে জঙ্গীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে নেটওয়ার্ক গড়তে সক্ষম হচ্ছে সহজেই। সিইপি যখন চরমপন্থীদের প্রোফাইল ঘেঁটে গবেষণা চালাচ্ছিল, তখন দেখা গেছে ‘সাজেস্টেড ফ্রেন্ডস’ ওই চরমপন্থীদের সিইপির গবেষকদের কাছে বন্ধু হিসাবে সুপারিশ করছে। সিইপির রবার্ট পোস্টিংস দ্য সানডে টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন, ‘ফেসবুকের লক্ষ্যই হলো যত বেশিসংখ্যক মানুষকে যোগাযোগ করানো। আর তাই এমন একটা সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছে, যা সহজেই চরমপন্থী ও জঙ্গীদের মধ্যে যোগাযোগ ঘটাচ্ছে, যার ফলে জঙ্গীরা সংগঠিত হতে পারছে।’ পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে সহজেই উগ্রপন্থায় অনুপ্রাণিত করছে চরমপন্থীরা। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসাবে নিউইয়র্কের এক বাসিন্দার ছ’মাসের মধ্যে উগ্রপন্থায় বিশ্বাস স্থাপনের কথাও তুলে ধরা হয়েছে সিইপির দেয়া তথ্যে। গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি ইন্দোনেশিয়া থেকে পাঠানো এক আইএস সমর্থকের ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ গ্রহণ করেছিলেন ২০১৭-এর মার্চে। এবং ঐ আইএস সর্মথকের প্রভাবে সে নিজেও অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠে উগ্রপন্থায়। উগ্রপন্থীদের বিষয়বস্তু চিহ্নিত করে তা মুছে দেয়ার ক্ষেত্রে ফেসবুকের অক্ষমতার বিষয়টিও প্রকাশ্যে চলে এসেছে সিইপির এই গবেষণায়। পোস্টিং-এর আরেক সহকর্মী জর্জি ওয়াটার্স আরো পরিষ্কার করে জানান, ‘জঙ্গীরা যেভাবে ফেসবুকের সুবিধা গ্রহণ করছে সে বিষয়ে কতৃপক্ষের উদাসীনতা মেনে নেয়া যায় না।’ তবে, অন্যান্য অনেক অভিযোগের উত্তরের মতোই ফেসবুক দিয়েছে পাশ কাটানো বক্তব্য। অস্বীকার করেছে সিইপির দাবি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘আমাদের সাইট যাতে কোন জঙ্গী ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা কড়া নজর রাখছি এবং পদক্ষেপ নিচ্ছি। এটি ঠেকাতে আমরা অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ এবং জনবলও নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু, অনলাইন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কোন সহজ প্রযুক্তি এখনও গড়ে ওঠেনি।’ প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কতদিন বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবেন সে প্রশ্নও উঠেছে। এমনিতেই বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কটে ভোগা ফেসবুকের এই দাবি নিশ্চিতভাবেই বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সংস্থা দেখবেন আতশকাঁচের নিচে। বিশেষত অভিযোগ যখন মূর্তিমান আপদ আইএস নিয়ে। নানা অজুহাতে অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার অতীত রেকর্ডধারী ফেসবুকের ব্যাখ্যা এবার আর অত সহজে গৃহীত হবে সেটাও না নিশ্চিত। মায়ানমার, শ্রীলংকায় ফেসবুক অপব্যবহার এবং তা রোধে কতৃপক্ষের ব্যর্থতার স্মৃতি এখনও তাজা। সিইপি তাদের পূণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করতে যাচ্ছে এ মাসের শেষে, তাতে থলে থেকে বেড় হয়ে আসতে পারে নতুন বেড়াল। আপাতত বিষয়টিকে জাকারবার্গের জন্য নতুন সঙ্কট বলেই বিবেচনা করছেন অনেকে। সূত্র: দ্য সানডে টেলিগ্রাফ, ভাইস নিউজ
×