ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় জরাজীর্ণ বীজাগার মাদকসেবীদের আখড়া

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১৫ মে ২০১৮

বগুড়ায় জরাজীর্ণ বীজাগার মাদকসেবীদের আখড়া

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ কেউ বলে ভূতের বাড়ি। কেউ বলে পোড়া বাড়ি। হালে সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আখড়া। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি বিভাগের আওতায় এই ঘরগুলো নির্মিত হয় ষাটের দশকে। নাম হয় বীজাগার। এখন এই ঘরগুলো জরাজীর্ণ। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, বর্তমানে কৃষি কার্যক্রম অনেক উন্নত। আগামীতে প্রতিটি ইউনিয়নের সরকারী এই স্থানে বহুতল কৃষি সেবা কেন্দ্র নির্মিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ৩০ উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের আওতায় কৃষি সেবা কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বগুড়ায় এই কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে সারিয়াকান্দি ও নন্দীগ্রামে। বগুড়ার ১২ উপজেলার ১শ’ ৮টি ইউনিয়নে অবস্থিত প্রতিটি বীজাগারে বসতেন কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজাররা (বর্তমানে তাদের পদবি উপ সহকারী কৃষি অফিসার)। কৃষির পরামর্শ এবং বীজ সার কীটনাশক সরবরাহ করা হতো এই বীজাগার থেকে। বর্তমানে এই ঘরগুলোর বেশিরভাগই পরিত্যক্ত ও বেহাত হয়ে গেছে। দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্লক সুপাইভাইজাররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ দেন। জরাজীর্ণ ঘরে তারা আর বসতে পারেন না। দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দরজাগুলোর কোনটি ভেঙ্গে ঝুলে আছে। কোনটি একেবারে নেই। দেখার কেউ নেই। দীর্ঘদিন ভবনগুলো এভাবে পড়ে থাকতে দেখে প্রভাবশালীরা সুযোগ নেয়। ভবন সংলগ্ন যে ভূমি আছে তাও দখল করা হয়। কখনও মাদকসেবী কখনও দুর্বৃত্তের আখড়ায় পরিণত হয়। ক’জন উপ সহকারী কৃষি অফিসার বললেন, ওই ঘরে বসার মতো অবস্থা এখন আর নেই। এক সময় তারাই বীজ সার কীটনাশক বিতরণ করতেন। কৃষির সহায়তা পরামর্শ ছাড়াও যাবতীয় কর্মকা- পরিচালিত হতো ওই ছোট ঘর থেকে। ৯০’র দশকের পর হতে বেসরকারীভাবে ডিলারদের মাধ্যমে বীজ সার কীটনাশক খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। বগুড়া সদরের তেলিহারা গ্রামের কয়েক কৃষক বললেন, প্রয়োজনের সময় কৃষি বিভাগের লোকজনদের পাওয়া যায় না। আগে বীজাগারে গেলে দেখা মিলতো। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের বীজাগারটি ৮ শতাংশের ওপর। ভবন ও ভূমি দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। এই ভবন ও ভূমি উদ্ধারের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে মামলা করা হয়েছে। উপজেলার ৯টি বীজাগারই এখন বন্ধ। শিবগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন বীজাগারের মধ্যে শুধু সদর ইউনিয়নের বীজাগার সংস্কার করে ব্যবহার করা হচ্ছে। হাতে গোনা দুই একটি ছাড়া প্রায় সব বীজাগার পরিত্যক্ত ও দখল হয়ে আছে। এই বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানান, সব মিলিয়ে বগুড়ায় ইউনিয়ন বীজাগারগুলোর ভূমি প্রায় ১৩ একর। বীজাগারগুলোর বেশিরভাগই পরিত্যক্ত। যেগুলো দখল হয়েছে তা উদ্ধারে মামলা করা হয়েছে। এইসব বীজাগার নিয়ে সরকারের একটি বড় পরিকল্পনা আছে। প্রতিটি ইউনিয়নের এই বীজাগার বদলে কৃষি সেবা কেন্দ্র নির্মিত হবে। নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ৩০টি কৃষি সেবা কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি সেবা কেন্দ্র হবে চার তলা করে। উপ সহকারী কৃষি অফিসারগণ সেই ভবনেই থাকবেন। নিচ তলায় থাকবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। ডিজিটাল প্রযুক্তি স্থাপিত হয়ে সকল তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে।
×