ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসীদের পাঠানো খেজুরে উচ্চহারে শুল্কারোপ

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৫ মে ২০১৮

প্রবাসীদের পাঠানো খেজুরে উচ্চহারে শুল্কারোপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রীর ইতিবাচক আভাসের পরও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো খেজুরের ওপর শুল্ক ছাড়ের বিষয়টির কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে এখনও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা কুরিয়ারে যেসব খেজুর পাঠাচ্ছেন তার ওপর উচ্চহারে শুল্কারোপ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে প্রবাসীরা খেজুর পাঠাতে পারছেন না। এতে করে রমজান সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাজারে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। খেজুর নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটচক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে যেসব শ্রমিকরা কুরিয়ার করে রমজানে খেজুর পাঠিয়ে থাকেন তার ওপর উচ্চহারে শুল্কারোপ করা হয়। এই শুল্কহার আমদানিকৃত খেজুরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ কারণে শ্রমিকরা প্রবাসে খেজুর ফ্রি পেলেও দেশে পাঠাতে তা বাজার মূল্যের চেয়েও বেশি দাম পড়ে যায়। এ বিষয়টি সম্প্রতি অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইআরএফ প্রতিনিধিরা বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে শুল্কছাড়ের যৌক্তিক কারণও ব্যাখ্যা করা হয়। সে সময় অর্থমন্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এবং অর্থসচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু রমজান দরজায় কড়া নাড়লেও এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি এনবিআর। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসে খেজুর আনতে আগের শুল্কহার কার্যকর রয়েছে। এটা কমানো হয়নি। এছাড়া এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে এনবিআরের সদস্যদের অভ্যন্তরীণ বৈঠক করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, খেজুরের শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। জানা গেছে, আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে ইতোমধ্যে খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। কয়েকদিন পর আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে জাহেদি খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা দরে। এছাড়া ভালমানের খেজুর ৪৫০-২০০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত রমজানেও পাইকারি বাজারে জাহেদি খেজুর ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশে বর্তমানে চাহিদার তিনগুণ খেজুর মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আমদানিকারক, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষারোপ করেন। কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কয়েকজন অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে খেজুর নিয়েও কারসাজি করছেন। তারা মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে দেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্প্রতি এরকম তিন অসাধু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুদের দায়ে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। রাজধানীর কোতোয়ালি থানার বাদামতলীতে র‌্যাব-৩ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। জানা গেছে, বছরজুড়ে খেজুরের চাহিদা থাকে ২০ হাজার টন। দেশে খেজুরের উৎপাদন হয় না বলে পুরোটাই আমদানিনির্ভর। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, আলজিরিয়া, তিউনিশিয়া, ইরাক ও ইরান থেকে খেজুর আমদানি করা হয়। তবে সংযুক্ত আমিরাত থেকে বেশি আমদানি করা হয়। কাপ্তান বাজারের খেজুর ব্যবসায়ী জামশেদ বলেন, সাধারণত রমজানের সময় দেশে ৪০ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। বিদেশ থেকে যেসব খেজুর আনা হয় এর মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো খেজুরও কম নয়। চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণে এ খেজুরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। তবে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে এবার প্রবাসীরা খেজুর পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। রমজানে বিভিন্ন পণ্যের ওপর নানা ধরনের ছাড় দিলেও বিষয়টির দিকে তেমন নজর দেয়া হচ্ছে না। অন্যান্য পণ্যের মতো শুধু রমজানে প্রবাসীদের পাঠানো খেজুর শুল্কমুক্ত কিংবা নামমাত্র শুল্ক আরোপ হলে রোজাদারদের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় পণ্যটি সহজলভ্য হতে পারত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, রমজান সামনে রেখে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বিশেষ করে খেজুর বাগান বা খেজুর প্রক্রিয়াজাতকরণ কোম্পানিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা বিনামূল্যে প্রচুর খেজুর উপহার হিসেবে পেয়ে থাকেন। এই সময় বাগান বা ফ্যাক্টরির মালিকরাই দেশে পাঠানোর জন্য তাদেরকে এইসব খেজুর উপহার দেন। প্রবাসীদের দাবি, উচ্চ শুল্ক হারের কারণে এই খেজুরগুলো তারা দেশে পাঠাতে পারেন না। বর্তমান নির্ধারিত শুল্কে খেজুরগুলো দেশে এলে তা আমাদিকৃত খেজুরের চেয়ে দাম বেশি পড়ে যায়। খেজুরগুলো তারা শুল্কমুক্ত বা নামমাত্র শুল্কে দেশে পাঠাতে পারলে একদিকে যেমন রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা পূরণ হয়, অন্যদিকে তাদের আত্মীয় পরিজনরাও কম মূল্যে খেজুর পেতে পারে। তারা সীমিত পরিসরে হলেও শুধু রমজানে এমন সুবিধা দাবি করে আসছেন।
×