ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশেরও

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ মে ২০১৮

বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশেরও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি বজ্রপাতে ব্যাপকহারে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ জ্বলে পুড়ে যাওয়ার খবর আসছে। এসব খবরে ঘরে থাকা মানুষও আতঙ্কগ্রস্ত হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন সঠিকভাবে বিল্ডিংয়ের বৈদ্যুতিক নক্সা করে কাজ করা হলে এই ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে বলেন, বজ্রপাত প্রাকৃতিক বিদ্যুত। সাধারণভাবে বিদ্যুতের একটি তারের সঙ্গে অন্য একটি তার জড়িয়ে গেলে শটসার্কিট হয়ে সব কিছু পুড়ে যায়। এখানে প্রাকৃতিক বিদ্যুতের সঙ্গে গ্রিডের বিদ্যুতের সংমিশ্রণ ঘটায় একই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে বিদ্যুতের সংযোগ রাখা উচিত নয় বলে জানান তিনি। সম্প্রতিক বজ্রপাতে পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারির বাসভবনের গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। আবার দৈনিক জনকণ্ঠ ভবনের একটি লিফট ছাড়াও কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক দিনে দৈনিক জনকণ্ঠে ফোন করে অনেক পাঠক বজ্রপাতে তাদের বাসার বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ পুড়ে যাওয়ার খবর জানিয়েছেন। সম্প্রতি বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মীর আসলাম উদ্দিন বলেন, তার বাসার টেলিভিশনটি বজ্রপাতের কারণে পুড়ে গেছে। তিনি টেলিভিশনটি সারানোর জন্য স্যামস্যাং এর নির্ধারিত কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, পাওয়ার সাপ্লাই এবং মাদারবোর্ড পুড়ে গেছে। এখন সারানোর জন্য ২৪ হাজার টাকা লাগবে। একই বাড়িতে বসবাসরত তার ভাইয়ের টেলিভিশনও বজ্রপাতে পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি। বনশ্রীর বাসিন্দা তৌহিদুল হাসান খালিদ জানান, তার বাসার কম্পিউটারটি বজ্রপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি কম্পিউটারটি সারাতে গেলে কাস্টমার কেয়ার থেকে জানিয়েছে বজ্রপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় ঘরে থাকা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন- টিভি, ফ্রিজ, ফোনের ব্যবহার ছাড়াও ভবনের বিদ্যুত পরিবাহী লোহার গ্রিল বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। ফলে বজ্রপাতের সময় এগুলোর ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেকটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাঙ্ক বসানো থাকে। এই ট্যাঙ্কের ওপর বজ্রপাত হলে সে সময় কেউ কলে পরিবাহিত পানি ব্যবহার করতে থাকলে তার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ বজ্রপাতের বিদ্যুত পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। ভবনের গা বেয়ে যদি বজ্রপাত চলে যায় সে ক্ষেত্রে গ্রিলের সংস্পর্শে কেউ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া ডিশের ক্যাবলসহ অন্যান্য ক্যাবলের মাধ্যমেও ঘরের ভেতরে থাকা যে কেউ এর শিকার হতে পারেন। বজ্রপাত প্রতিরোধে বিল্ডিং লাইটেনিং এ্যারেস্টার (বজ্রপাত প্রতিরোধক) প্রতিস্থাপন করলে কোন ক্ষতি হয় না বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন মানুষ অনেক টাকা খরচ করে বিল্ডিং করলেও সঠিকভাবে বৈদ্যুতিক লাইনের নক্সা করেন না। সাধারণত এই কাজ করানো হয় মিস্ত্রিদের দিয়ে। এতে এ ধরনের ঝুাঁকির মধ্যে থেকে যায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ। প্রাকৃতিকভাবে তালগাছ লাইটেনিং এ্যারেস্টার হিসেবে কাজ করে। এর ব্রিটিশ সরকারের সময় প্রতি মৌজায় বসানো সীমানা পিলার বজ্রপাত প্রতিরোধে কাজ করত বলে কথিত রয়েছে। বলা হয় বিপুল অর্থের লোভে এক শ্রেণীর মানুষ সীমানা পিলারগুলো তুলে বিক্রি করে দেয়ায় বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। এখন নতুন করে মৌজা জরিপ করার সময় ভূমি জরিপ অধিদফতর যে পিলার স্থাপন করে তার মধ্যে পিতলের দ- থাকে। আগে এসব পিলারের মধ্যেই বজ্রপাত প্রতিরোধক থাকত। প্রকৌশলী সাইফুদ্দিন আহসান বলেন, আমাদের বিদ্যুত কেন্দ্র এবং সাব-স্টেশনে বজ্রপাত হয় না। সব জায়গাতেই লাইটেনিং এ্যারেস্টার বসানো আছে। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল) এই প্রকৌশলী জানান, ভবন মালিকরা লাইটেনিং এ্যারেস্টার বসালে বজ্রপাতকে টেনে নিতে পারে। এতে যে কোন ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
×