ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বছর জিডিপি ৮ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ মে ২০১৮

আগামী বছর জিডিপি ৮ ভাগ ছাড়িয়ে যাবে ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগামী অর্থবছরেই মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। যদিও প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। তাছাড়া আগামী অর্থবছরের পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো হবে। কারণ, ওই অর্থবছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, মাতাবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তখন প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে এডিপির আকার কমতে শুরু করবে। কেননা তখন বড় প্রকল্প আর তেমন থাকবে না। শুধু রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। আগামী বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তার কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনানুষ্ঠানিক ওই ব্রিফিংয়ে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র ও আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। মন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের কারণে আগামী অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে- এই ধারণা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। গত ১০ বছরে আমাদের সক্ষমতা আমরা বাড়িয়েছি। এটা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ প্রকল্প নেয়ার যে সমালোচনা বিভিন্নজন করেন, সেটাও অযৌক্তিক। রাজনৈতিক সরকারের নেয়া প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনা আর অর্থনৈতিক বিবেচনা আসলে একই। চূড়ান্ত বিচারে সব প্রকল্প দেশের মানুষের সুবিধার জন্যই, এর বাইরে কিছু ভাবার সুযোগ নাই। সপ্তম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ওই সময়ের এক অর্থবছর আগেই আমরা সেই টার্গেট ছাড়িয়ে যাবো। কিভাবে এটি সম্ভব হবে সেই ব্যাখ্যা দিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার কিছু কিছু বিষয়ে আমরা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে বিদেশী সহায়তার অর্থছাড় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন হার দুটোই বেড়েছে। অর্থবছরের শেষের দিকে আকার কমিয়ে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা আরএডিপি করার প্রথা থেকেও আমরা এবার বেরিয়ে আসছি। এডিপিতে যা থাকবে তাই বাস্তবায়ন হবে। ভবিষ্যতে আরএডিপি হবে এডিপির আকার বাড়ানোর জন্য, কমানোর জন্য নয়। তাছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বড় আকারের মৌলিক সংস্কারে হাত দেয়া হবে। বিনিয়োগ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের জিডিপিতে বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমানে ৩১ শতাংশের বেশি, যা খুবই ভাল অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগে আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল জ্বালানি। আমরা সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি। আগামী বাজেটে কর্পোরেট কর হারও কমিয়ে আনা হবে। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন আদর্শ দেশ। এখন আমরা সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের প্রতি মনোযোগ দেব। আগামী দুই অর্থবছরের আমরা এফডিআইয়ের পরিমাণ ছয় থেকে সাত বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে চাই। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা এগুচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতিও এখন শক্ত অবস্থানে আছে। সামগ্রিক ঋণ পরিস্থিতিও প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে ভাল। চীনের জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ ১৮৫ শতাংশ, জাপানের ৪০০ শতাংশ। আমরা এই দুই দেশ থেকে ঋণ সহযোগিতা পাই। অথচ আমাদের জিডিপির তুলনায় ঋণ মাত্র ৪০ শতাংশ। সড়ক ব্যবস্থার করুণ পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সড়ক নির্মাণে বিটুমিন পদ্ধতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বিটুমিনের প্রধান শত্রু পানি। তাই আমরা মজবুত করে সড়ক নির্মাণ করলেও তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে ইটের সরবরাহে কিছুটা বিঘœ ঘটছে, তাছাড়া ভারত থেকে পাথর আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণেও কিছুটা জটিলতার তৈরি হয়েছে। এসব সমস্যা শীঘ্রই কেটে যাবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের আরও বেশি দায়িত্ব নেয়া উচিত বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ফসলের প্রাথমিক মূল্য ও ভোক্তা পর্যায়ের মূল্যের মধ্যবর্তী ব্যবধান অনেক বেশি। ব্যবসায়ীদের অনেকে অতি মুনাফা করছেন। এটা অনুচিত। কৃষক ও ব্যবসায়ী দুই পক্ষের জন্য উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরিতে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
×