ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছি এখন আন্দোলনের হুমকির কোন যুুক্তি নেই

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৫ মে ২০১৮

কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছি এখন আন্দোলনের হুমকির কোন যুুক্তি নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা নিয়ে আমি তো আগেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছি। আমরা তো বলেছি, এটা করব। কিন্তু এখনই এটা করতে হবে? এ জন্য তো সময় লাগবে। আমি তো বলেছি কোটা থাকবে না। এরপরও আল্টিমেটাম, আন্দোলনের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এটার তো কোন যুক্তি নেই। কোটার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। তারপরও হুমকি দেয়াটা বাড়াবাড়ি। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোন কোন মহল কোটার বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এটা দ্রুত করা যায় কি-না সে বিষয়ে একটু ভাবেন। কারণ, এর সমাধানের বিষয়টি তো আপনিই দিয়েছেন। উল্লেখ্য, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দুপুরের দিক থেকে শাহবাগ মোড়েও অবরোধ করেছে তারা। এছাড়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা করছে করুক। যৌক্তিক কোন সমালোচনা থাকলে করতে পারে। কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে কেন ? এ স্যাটালাইটের মালিকানা সরকার ছাড়া অন্য কারও হওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচারের জন্য বাইরে টাকা দিতে হতো। এতে প্রচুর টাকা ব্যয় হতো। এখন সে টাকা আমাদের সাশ্র্রয় হবে। বিএনপি নেতারা টেকনিক্যাল বিষয়গুলো না বুঝে আন্দাজে কথা বলছে। এদিকে সরকারী চাকরিতে কোটা বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ আশার কথা জানান। কোটার বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোটা নিয়ে আলোচনা (মন্ত্রিসভা বৈঠকে) হয়নি। কিন্তু কোটাটা প্রক্রিয়াধীন আছে, হয়ত কিছুদিনের মধ্যে হয়ে যাবে। আমি যতদূর শুনেছি এর (কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন) সার সংক্ষেপ অলরেডি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চলে গেছে। হয়ত আমরা শীঘ্রই সিদ্ধান্ত পাব, ইনশাআল্লাহ। কমিটি কবে নাগাদ গঠন হবে -এ বিষয়ে শফিউল আলম বলেন, এখনও আমরা কোন (কমিটি গঠনের) প্রজ্ঞাপন পাইনি, হয়ত হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী সরকারী চাকরিতে কোটা প্রথার বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপন চেয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা। এর আগে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করে তারা। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। এ কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করছিলেন তারা। গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৭ মে পর্যন্ত সময় নেন ওবায়দুল কাদের। এরপরেও আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোন কোটারই দরকার নেই’। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।
×