ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পার্বতীপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবল সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৫ মে ২০১৮

পার্বতীপুর রেলওয়ে কারখানায় জনবল সঙ্কট

শ.আ.ম হায়দার, পার্বতীপুরৃ ॥ নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দেশের একমাত্র ভারি মেরামত পার্বতীপুর রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। এই কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯২ সালের ১৪ এপ্রিলে। এখানকার দেশী প্রকৌশলী, কারিগর এমনকি ছোট কর্মীরা পরিত্যক্ত ও অকেজো ইঞ্জিন মেরামতের মাধ্যমে সচল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আরও অবদান রাখতে পারতো, তবে অপ্রতুল অর্থবরাদ্দ, লোকবলের অভাব ও চট্টগ্রাম পাহাড়তলীর প্রধান সরঞ্জাম স্টোর থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহে বিলম্ব হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী লোকোমোটিভ মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না জানা গেছে। বর্তমানে ৪টি ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) ভারি মেরামত চলছে। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরে মানুষের ঘরে ফেরার সুবিধার্থে তথা নির্বিঘেœ ট্রেন চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ইঞ্জিনগুলো হস্তান্তর (আউটটার্ন) করা হবে। ১২ মে শনিবার সকালে রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক এই কারখানা পরিদর্শনকালে কারখানার প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার বোরহানউদ্দিন এ সুখবর জানান। মন্ত্রী সন্তুষ্ট হয়ে আরও উৎপাদন বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন, রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আর এস) মোঃ শামছুজ্জামান, পশ্চিম রেলের মহা-ব্যবস্থাপক মোঃ মজিবর রহমান প্রমুখ। সূত্র মতে, ২০১২ সাল থেকে পড়ে থাকা দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইঞ্জিন ভারি মেরামত করে গত বছর আউটটার্ন দেয়া হয়। যা বর্তমানে রেলের লোকোমোটিভ বহরে যুক্ত হয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রেখেছে। দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা ৮টি প্ল্যান্টস এ্যান্ড মেশিনারিজ চালু করে কাজে লাগানো হয়েছে। রেলসূত্র মতে, রেলওয়েতে বর্তমানে লোকোমোটিভ রয়েছে ২৭২টি। এসব ইঞ্জিন ছয় বছর পরপর একবার মেরামত বা ওভারহোলিং করার নিয়ম। তার মধ্যে ১০৬টি লোকোমোটিভ মালামাল ও অর্থসঙ্কটের কারণে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়াও এসব ইঞ্জিনের মধ্যে ৭০ ভাগ আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ ও ৩০ ভাগ মেয়াদ উত্তীর্ণ। চলছে ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ জাপান ও কানাডা থেকে ক্রয় করে আনা ইঞ্জিনগুলো একেবারে চলাচলের অযোগ্য। চালানো হচ্ছে কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে। বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য প্রায় প্রতিটি ইঞ্জিনে ৬টি ট্রাকশন মোটর থাকে। তবে সে অনুযায়ী যে পরিমাণ থাকার কথা তা নেই। অকেজোর স্থলে নতুন ট্রাকশন মোটর পুনঃস্থাপন সম্ভব হয়নি। যার ফলে এভাবেই চলছে ইঞ্জিনগুলো। সূত্র মতে, কারখানার স্বাভাবিক মেরামত প্রক্রিয়া চালু রাখতে প্রতি বছরে কমপক্ষে ৭২ কোটি টাকার প্রয়োজন। সেখানে চলতি অর্থবছরে অর্থবরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকা। কারখানায় সরাসরি কাজের জন্য সম্পৃক্ত মঞ্জুরিকৃত ৫৪৫ জনের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৩৭ জন। ৫৫ শতাংশ ঘাটতি জনবল দিয়ে কারখানার দক্ষ শ্রমিক, কর্মকর্তা ও সুষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণে পূর্বের মতই লোকোমোটিভ আউটটার্ন অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়েছে। ভারত থেকে মালামাল পরিবহনের জন্য লোকোমোটিভে কেলোকার নিজস্ব প্রযুক্তিতে সিবি কুপলার সংযোজন করা হয়েছে। ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়েছে। জনবল নিয়োগ করা না হলে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত জনবল দাঁড়াবে মাত্র ৮২ জনে। যা মঞ্জুরিকৃত জনবলের ১৫ শতাংশ। জনবল অভাবে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে অল্প মজুরিতে কাজ নেই মজুরি নেই হিসেবে নেয়া টি এল আর শ্রমিকদের মাধ্যমে কারখানা সচল রাখা হয়েছে। ন্যায্য বেতন দিয়ে চাকরি স্থায়ী করলে এরাই কারখানার উৎপাদনধারা অব্যাহত রাখবে। দ্রুত জনবল সঙ্কটের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে দেশের একমাত্র ভারি লোকোমোটিভ কারখানাটি মুখ থুবড়ে পড়বে। লোকোমোটিভ মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ৯৫ ভাগই বিদেশী উৎস থেকে। এছাড়াও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সময়মত যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের চাহিদাপত্র দিয়ে সিসিএসকে (প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়) চিঠি দিলে সেখান থেকে যন্ত্রাংশ পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এছাড়াও সঠিক বাজেট বরাদ্দ এবং মালামাল ক্রয় প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্তহীনতার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, অতীব জরুরী গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের অভাবে গুণগত মান বজায় রেখে লোকোমোটিভের ভারি মেরামত কাজে বিঘœ হচ্ছে। সমস্যার জটগুলো দূরিভূত করে সিসিএসকে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। আধুনিক ও গতিশীল করতে হবে মালামাল ক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে। তা না হলে কারখানার উৎপাদনের ধারাকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। খারাপ পর্যায়ে যাবে। এমন কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম রেলের দায়িত্বশীল কতিপয় কর্মকর্তা। কেলোকার (কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা) প্রধান নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার বোরহানউদ্দিন জানান, লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সচল না থাকলে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কারণে এই কারখানাকে অবশ্যই চালু রাখতে হবে। জনবল সঙ্কটের সমাধান করে বাৎসরিক বাজেট বাড়াতে হবে। এছাড়াও চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে অবস্থিত প্রধান সরঞ্জাম স্টোর থেকে সময়মত মালামাল পাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভারি ইঞ্জিন মেরামতের ক্ষেত্রে কেলোকা নজির সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×